নক্ষত্রের গোধূলি-[১২৫]-১০৯

২২৬।
দুপুরে মার্কেটের পাশেই এক ইজিপশিয়ান রেস্টুরেন্টে যেয়ে খেয়ে আসল। ভাত, কলিজা ভুনা আর বামি (ঢেঁড়স) স্টু। ভালই লাগল। খেয়ে আবার অফিসে এসে বসল।
-তুমি ইচ্ছে করলে একটু ঘুরে আসতে পার তবে বেশি দূরে কোথাও যেয়ো না
-একটু মার্কেটের ভিতরে গিয়েছিলাম, তাহলে দেখি আরও কিছু দেখে আসি। কখন ফিরতে হবে? মানে বাসায় ফিরবে কখন?
-৫টায়
-আচ্ছা তাহলে আমি আগেই ফিরে আসছি
রাশেদ সাহেব বের হয়ে সামনে পিছনে মার্কেটের ভিতরে অনেকক্ষণ ঘুরে এলাকাটা মোটামুটি দেখে ৫ টার আগেই ফিরে আসলেন
-ও তুমি এসে পড়েছ? তাহলে চল বের হই কিছু খাবার কিনে বাসায় চলে যাব।
-কি খাবার কিনবে?
-রাতে খেতে হবে না?
-তুমি কি রেডি খাবার কিনে বা রেস্টুরেন্টেই খাও?
-হ্যাঁ আমি কিছু রান্না করতে পারি না, শুধু সকালে ব্রেড বা কর্ণ ফ্ল্যাক্স খেয়ে বের হই
-ও! এক কাজ করবে, আমি রান্না করতে পারি, চল কিছু মাছ মাংস আর সবজি কিনে নিয়ে যাই আজ আমি রান্না করি দেখ কেমন হয়
-তুমি রান্না করতে পার?
-চেষ্টা করে দেখিআমি গত কয়েক বছর নিজেই রান্না করে খেয়েছি। বাইরের খাবার আমার ভাল লাগে না আর তা ছাড়া ওতে অনেক খরচ হয়ে যায়
-বেশ দেখি তুমি কেমন রান্না কর
-আচ্ছা তোমরা কি খাও, ভাত নাকি রুটি?
-সবই খাই
-তাহলে সমস্যা নেই, আমি ভাত রান্না করতে পারি কিন্তু রুটি বানাতে বেশ ঝামেলা মনে হয়
-কোন অসুবিধা নেই, যেদিন রুটি খেতে ইচ্ছে হবে সেদিন কিনে নিয়ে যাব, চল বের হই
রুমে তালা দিয়ে বের হয়ে একটু হেঁটে মার্কেটের ভিতরে চলে আসল। সকালে দেখেছে কোথায় কি আছে তবুও ওখানে না যেয়ে আহাদ একটা সুপার স্টোরে ঢুকল। রাশেদ সাহেব দেখে দেখে তার রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় বাসমতী চাল, হেরিং, বড় সাইজের সার্ডিন, টুনা, স্যামন মাছ, গরু আর ভেড়ার মাংস, সবজি, ডাল, তেল, পাউডার আদা রসুন সহ সব মশলা, লবণ, ব্রেড, চিজ, ডিম কিনে ট্রলিতে তুলে নিয়েছে। দাম দেয়ার সময় এবার নিজে দাম দিতে চাইল কিন্তু আহাদ আগের মত আপত্তি জানাল
-দেখ তুমি আমার গেস্ট আর আমরা ইজিপশিয়ানরা গেস্টকে কিছু কিনতে দিতে পারি না
-গেস্ট তাকেই বলে যে এসে আবার চলে যায়, কিন্তু আমিতো চলে যাচ্ছি না এখানেই অন্তত সামনের এক সপ্তাহ থাকব বলে ভাবছি কাজেই এসবের দামটা আমাকেই দিতে দাও পরে দেখা যাবে তাছাড়া এতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে কোন পে করতে দাওনি
-আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তোমার কথা মেনে নিলাম তবে এ কথা মনে রেখ এটা কিন্তু আমাদের রীতি বিরুদ্ধ
-ঠিক আছে আমি তোমার রীতির উপরে সম্মান রেখেই বলছি, তুমি আমার জন্য যা করেছ সে আমার জন্য অনেক কিছু সে কথা আমি তোমাকে বোঝাতে পারব না।
-তাহলে কি তুমি শোধ দেয়ার কথা বলতে চাইছ?
-ছি ছি! এ তুমি কি বললে? তোমার ঋণ আমি শোধ করতে যাব কেন, তুমি না বন্ধু বলে পরিচয় দিয়েছ
আসলে আমাদের আতিথেয়তাও তোমাদের মতই। বন্ধুর ঋণ শোধ করতে হয় বন্ধুত্ব দিয়ে, আর কিছুতেই বন্ধুত্বের ঋণ শোধ হয় না।
শেষ পর্যন্ত রাশেদ সাহেব তার পকেটের স্টার্লিং পাউন্ড দিয়ে দাম দিয়ে মালামাল ব্যাগে ভরে বের হলেন। পাউন্ডে দাম নিতে সমস্যা করছিল। কাউন্টারের মেয়েটা অচেনা নোট নিতে চাইছিল না কিন্তু সে ওদের কাস্টমার সার্ভিসে জিজ্ঞেস করল কাস্টমার সার্ভিসের মোটকু মহিলা কাকে যেন ফোন করে পাউন্ডের রেট জেনে হিসেব করে দাম রেখে দিল। মাত্র ৪০ পাউন্ডের বাজার হলো। হিসেব করে দেখল এখানে জিনিষ পত্রের দাম অন্তত খাবার জিনিসের দাম ওখানের চেয়ে অনেক কম। রাশেদ সাহেব এই স্টোর থেকে বের হয়ে মনে করে পাশের মানি চেঞ্জারের কাছ থেকে ১০০ পাউন্ড চেঞ্জ করে নিলেনএক পাউন্ডে ১৮ রেন্ডটাকাগুলা পকেটে রেখে বের হয়ে গাড়িতে বসে সোজা আহাদের বাসায় ফিরে এলো। বাসায় এসে কাপর বদলে রান্না ঘরে ঢুকলেনআহাদও ওর পিছনে রান্না ঘরে আসল
দেখি তুমি কেমন করে রান্না কর


২২৭।
এখানে শুধু পিঁয়াজ ছিলে কাটতে হয় তাছাড়া প্রায় সব কিছুই পাউডার কাজেই কোন ঝামেলাই নেই। এমনকি মাছ মাংসও কোটা ধোয়া ফ্রোজেন প্যাকেট, অবশ্য ফ্রেশ মাংস বা আস্ত মাছও পাওয়া যায় কিন্তু ঝামেলা মনে করে ওগুলা কিনেনি। একে একে বাটি পেয়ালা বের করে একটা সমস্যায় পড়ে গেল রান্নার মত হাড়ি পাতিল নেই শুধু একটা নন স্টিক ফ্রাইংপ্যান আছে, আবার বাটি পেয়ালাও যথেষ্ট নেই তবে কাপ পিরিচ সহ প্লেট আছে যথেষ্ট।
-আহাদ, অন্তত দুইটা হাড়ি লাগবে আর কয়েকটা পেয়ালাও লাগবে
-আমি কোনদিন কিছু রান্না করিনি তাই এসব কিছু নেই, আচ্ছা একটু অপেক্ষা কর আমি নিয়ে আসছি
-বের হবে?
-হ্যাঁ মার্কেটে যেতে হবে না?
-তাহলে চল আমিও যাই তুমি আবার কি না কি কিনে আনবে
হ্যাঁ চল।

আবার কাপর বদলে দুইজনে বের হয়ে মার্কেটে গিয়ে একটা ভাতের আর একটা তরকারির পাতিল, একটা কড়াই আর কয়েক সাইজের কয়েকটা পেয়ালা কিনে এসে ঢুকল কিচেনে। কি করা যায় ভাবতে ভাবতে ঠিক করল সাদা ভাত, ভাজা স্যামন মাছ আর ডাল রান্না করি। শুকনা মরিচের গুড়া, লবণ আর সামান্য একটু তেল, লেবুর রস দিয়ে স্যামন মাছ মাখিয়ে রেখে দি্লেনএকটা চুলায় ভাত এবং মুগের ডাল বসিয়ে দিয়েছেকয়েকটা আফ্রিকান কাঁচামরিচ ফালি করে রাখলেনঘন মুগের ডাল আর ভাত হয়ে গেলে ফ্রাইংপ্যানে মাছ ছেড়ে দিতেই সুন্দর একটা ঘ্রাণ ছড়িয়ে গেল। তাই দেখে আহাদ এখনই খেতে ইচ্ছে করছে এমন ইশারা করল! একটু অবাক হয়ে বললো-
-তুমি তো দারুণ রান্না কর রাশেদ!
-আরে এটা তো খুবই সাধারণ, একটু টেস্ট করবে?
-হ্যাঁ দাও দেখি
-একটু অপেক্ষা কর।
একটু পরে মাছগুলা মোটামুটি ভাজা হলে রাশেদ সাহেব একটা চামচে করে একটু ডাল আর একটা পিরিচে এক টুকরা ভাজা মাছ উঠিয়ে দিলেন
-এটা টেস্ট কর পরে আরও স্পেশাল কিছু করব তখন খেয়ে দেখবে।
আহাদ দেরি সইতে পারছিল না ওই গরম অবস্থায়ই মুখে দিয়ে বলল-
-ভেরি গুড! ডেলিসাস!

সেদিনের মত রান্না হয়ে গেল। রাশেদ সাহেবও তার নিয়তির কাছে শোকর জানালেননতুন দুই বন্ধু রাতে একসাথে খেতে বসল। আহাদ সবকিছু দেখে আগেই শুধু অবাক চোখে রাশেদ সাহেবের দিকে তাকাচ্ছিল। 
-খুবই ভাল লাগছে, অসাধারণ, অবিশ্বাস্য! আমি ভাবতেই পারছি না তুমি কেমন করে করলে?
-কেমন করে আবার করব তুমি নিজের চোখেই দেখলে তো! পাশে দাঁড়িয়ে ছিলে না?
-বেশ বেশ! আমি কিন্তু তোমাকে এখান থেকে যেতে দিচ্ছি না, তুমি এখানেই থাকবে
-আচ্ছা, সে দেখা যাবে।

[চলবে]

No comments:

Post a Comment

Back to Top