নক্ষত্রের গোধূলি-[১২৫]-১১০

২২৮।
সে রাতে অনেকক্ষণ গল্প গুজব করলেনএ কয়দিনের মধ্যে আহাদের সম্পর্কে তেমন কিছু শোনার মত মনের অবস্থা ছিল না কিন্তু আজ মন হালকা হওয়াতে রাশেদ সাহেব বললেন, বল দেখি তোমার বাড়ি কোথায় ওখানে কে কেমন
আছে? তোমার সম্পর্কে তো কিছুই জানা হলো না!
-তুমি কি কখনও কায়রো গেছ?
-হ্যাঁ যখন জাহাজে চাকরি করতাম তখন একবার গিয়েছিলাম
-তুমি সিম্যান ছিলে?
-হ্যাঁ সে অনেক আগে, আমার প্রথম জীবনে। তোমাদের কায়রোতে অনেক মসজিদ দেখেছি আমাদের ঢাকা শহরেও অনেক মসজিদ আছে
-ও! তাহলে তো চেনার কথা। আচ্ছা সব বলছি শোন। চল আগে চা নিয়ে আসি।
-চল বলে রাশেদ সাহেব আগে বের হয়ে ইলেকট্রিক জগে পানি ভর সুইচ অন করে কাপে চিনি আর দুধ ঢেলে রেডি করে রাখলেনপানি ফুটে উঠলে কাপে ঢেলে টি ব্যাগ আর চামচ দিয়ে এক কাপ আহাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে আবার এসে বসলেন
-বল এবার, শুনি!
-আমার বাড়ি নীল নদীর উত্তর পাড়ে, আল-গামা ব্রিজের পাশে আবদুল আজিজ আল সাউদ রোডে ইয়াসমিন সেন্টারের কাছে । বাবা মা ভাই বোন সবাই আছে, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আমিই সবার ছোট। আসলে আমার বাবা আমাদের আগের বাড়ি সাহারার পিরামিডের কাছে গিজার এক গ্রাম থেকে কায়রো এসেছিল ভাগ্যের সন্ধানে। ওখানে খুবই অভাব অনটনে দিন কাটছিল। আমার দাদা ছিলেন কৃষক কিন্তু ওখানে পানির খুব অভাব প্রায় মরু অঞ্চল তাই ভাল ফসল হোত না অনাবাদ লেগেই থাকতকায়রো এসে বাবা অনেক কষ্টে জীবন শুরু করে, প্রথমে খেজুরের ব্যবসা করত মানে খেজুর ফেরি করত। তারপরে আস্তে আস্তে একটা দোকান নেয় এবং অনেক কষ্ট করে এখন সে এক জন সফল মানুষ। এখন বয়স হয়ে গেছে বলে আমরা তাকে কিছু করতে দেই না, বড় ভাই বাবার ব্যবসা দেখে। বোন ইয়াসমিন সেন্টারে ডাক্তারি পড়েছে এখন সে কায়রোতে একটা হাসপাতালে ডাক্তারি করে।
-ও তাহলে এই ফলের ব্যবসা তোমাদের পৈতৃক ব্যবসা?
-হ্যাঁ ঠিকই ধরেছ
-তোমার মা কেমন আছে?
-ভাল আছে। মা আমাদের সমস্ত শিক্ষার দিকটা দেখাশুনা করেছে, বাবা লেখা পড়া করার সুযোগ পায়নি বলে এ ব্যাপারে তার তেমন মাথা ব্যথা ছিল না ভাবত আমরাও বড় হয়ে তার সাথে ব্যবসা দেখব কিন্তু মা ছিল আলেকজান্দ্রিয়া এলাকার এক স্কুল শিক্ষকের মেয়ে, সে কিছু শিক্ষিত ছিল আর তাই আমরাও সবাই লেখাপড়া করেছি। আমরা দুই ভাইই আলাবামা কলেজে পরেছি। কায়রো থেকে প্রায় দেড়শ মাইল দূরে। আমি মার্কেটিং আর বড় ভাই বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়েছি।
-আমি জানি তোমাদের মিশর প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরনো সভ্য দেশ, কায়রোতে অনেক প্রাচীন ইউনিভার্সিটি আছে অনেক পুরনো সভ্যতার স্থাপত্যও আমি দেখেছি
-হ্যাঁ ঠিকই বলেছ। চল শুয়ে পড়ি!
-চল

২২৯।
সকালে উঠে রাশেদ সাহেব ্বললেন -আজ আমি তোমার সাথে বের হচ্ছি না
-কোথায় যাবে?
-দেখি আশেপাশে ঘুরে দেখে জায়গাটা চেনার চেষ্টা করব
-সাবধানে ঘুরবে দেখবে আবার হারিয়ে যেয়ো না।
একটু থেমে আবার বললো-
-ভাল কথা মনে হয়েছে বলে টেবিলে রাখা একটা প্যাকেট থেকে ওর একটা কার্ড বের করে রাশেদ সাহেবের হাতে দিয়ে বললো এটা সাথে রেখ।
-আচ্ছা এখানে মোবাইলের সিম নেয়া যাবে?
-তুমি নেবে কেন, চল আমি নিয়ে দিচ্ছি, আমার নামে নিতে হবে। চল দেখি ভোডাকম এর একটা পে এস ইউ গো কার্ড নিয়ে নিব
-সপ্তাহে কত খরচ হয়?
-কত আর হবে, ৪০/৫০ রেন্ড
-বেশ তাহলে তোমার সাথেই বের হই
-হ্যাঁ চল আগে নাশতা খেয়ে নেই

আহাদ কালকের আনা ব্রেড, চিজ, বাটার বের করছিল
রাশেদ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন-
-ডিম কি ভাবে খাবে?
-কি ভাবে মানে?
-মানে পোঁচ নাকি অমলেট নাকি বয়েল্ড?
-অমলেট কর দেখি তুমি কেমন অমলেট কর
-আমাদের দেশে যেমন অমলেট খাই ওই ভাবেই করছি, এক মিনিট অপেক্ষা কর
বলে একটা পিঁয়াজ আর কয়েকটা কাঁচামরিচ কেটে আমাদের দেশের মত ডিম ভেজে নিয়ে আসলেনআহাদ ওর পিছনে দাঁড়িয়ে দেখছিল।
-আমি দেখছিলাম তুমি কেমন করে কর, তোমাকে পিঁয়াজ মরিচ বের করতে দেখে আমি ভাবছিলাম এ দিয়ে আবার কি করবে এখন বুঝলাম
একটু ছিঁড়ে মুখে দিয়ে আবার ডেলিসাস বললো
-আমরা খাই সাধারণত চিজ অমলেট, চিকেন অমলেট বা প্রন অমলেট তবে এভাবে পিঁয়াজ মরিচের অমলেট কখনও খাইনি, ভেরি টেসটি!
নাশতা খেয়ে এক সাথেই বের হয়ে আহাদের অফিসে গেল।
-চল একটু পরে বের হই, একটু কাজ আছে সেরে নিই আগে
-আচ্ছা তুমি ভিতরে যাও আমি একটা বিড়ি খেয়ে আসছি
[চলবে]

No comments:

Post a Comment

Back to Top