৮৪।
এদেশের প্রথম কর্মজীবনে রেস্টুরেন্টের বিভীষিকাময় দিন গুলো থেকে মুক্তির উল্লাস। প্রাচীন যুগের ক্রীতদাসদের কথা মনে হলো। অনেক দূরে চলে গেলেন, অনেক দূরে! ক্রমে মনটা আনন্দ থেকে আবার বিষাদে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো।
ওহ! ফোন করা হয়নি এখনও। উঠে ফোন বুথ খুঁজে পেলেন।
-হ্যালো,
-ভাবী, আমি এখন ব্রিকলেনে একটু পরেই আসছি। ফিরোজ কোথায়?
-এইতো, বাসায় আছে দিচ্ছি, আপনি চলে আসেন তাড়াতাড়ি।
-হ্যাঁ ফিরোজ, তোমার কথা মত আজ সকালে এসেছি।
-কাজ পেয়েছ?
-হ্যাঁ।
-কোথায়?
-স্কটল্যান্ডে।
-বেশ ভালো, তুমি কোথায় এখন?
-ব্রিকলেনেই আছি।
-চলে আস।
-আসছিলাম, হঠাৎ মনে হলো তুমি যদি আর কিছু করতে বল তাই জানার জন্যে ফোন করে নিলাম।
-না আর কিছু করতে হবে না, তুমি চলে আস আমি বাসায় আছি।
বাসায় আসতে আসতে মনে হলো রাত গভীর হয়ে গেছে অথচ রাত এখন মাত্র ছয়টা। প্রচণ্ড শীত। ফিরোজ বসেই ছিলো, সব কিছু শুনে বললো -
-তুমি আজ এখনই ফোন করে নোটিস দিয়ে দাও।
-হ্যালো, ওসমান ভাই, আমি রাশেদ বলছি।
-হ্যাঁ ভাই, বলেন কি খবর?
-ভাই আমি আগামী রবিবারের পর আর কাজ করব না আপনারা মানুষ দেখেন।
-কেন কি ব্যাপার, কি হয়েছে?
-না কিছু হয়নি এমনিই আমার ভালো লাগছে না তাই।
-আপনি কবে আসবেন?
-কাল বিকেলে।
-ঠিক আছে আসেন তারপর দেখা যাবে।
-তাহলে তুমি সামনের সোম বারে আসছ?
-হ্যাঁ, তাই আসছি তবে ঐ দিনেই আমাকে রওয়ানা হতে হবে।
-হ্যাঁ তাই কর।
রেস্টুরেন্টে ফিরে এসে সন্ধ্যায় যথারীতি কাজের জন্যে নিচে নেমে এলেন। হাতের কাজ গুছিয়ে নেবার আগেই লন্ডন থেকে সেফ এসে কিচেনে ঢুকেই সরাসরি রাশেদ সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো-
-কি ব্যাপার বেয়াই, আপনে নাকি চলে যাবেন?
-হ্যাঁ ভাই।
-কেন কি হয়েছে, আমরা কি করেছি, কেন যাবেন?
-না কিছুই হয়নি এমনিই আমার ভালো লাগছে না তাই, অন্য কিছু না।
-না আপনাকে তো আমরা যেতে দিব না, কেন যাবেন, সামনে কাজ করবেন, কিচেনে কষ্ট হচ্ছে? তাহলে বলেন কাল থেকেই আপনাকে সামনে পাঠিয়ে দিব।
এমন সময় আনোয়ার এসে হাজির।
-কি ব্যাপার কি হয়েছে?
-আরে দেখেন না বেয়াই সাহেব থাকবে না চলে যাবে।
-কেন, কি ব্যাপার ভাইসাব কি হইছে যাইবেন কেন?
-না ভাই তেমন কিছু না উনাকে বলেছি আমার ভালো লাগছে না তাই।
-আরে না, বললেই হইলো আপনাকে ছাড়া হবেনা, কি ভাবে যাইবেন?
-না ভাই একথা বলবেন না, আমি কাজ কর্ম পারছি না। আমারও কষ্ট হচ্ছে আপনাদেরও অসুবিধা হচ্ছে। আমি চলে গেলে ভালো লোক পাবেন।
-না তা হবে না, আমাদের তো ভালো লোকের দরকার নেই, আমাদের চাই আপনাকে।
-না ভাই আমি পারছি না।
-তাইলে যাইবেনই?
-জি ভাই।
-কবে যাইবেন?
-এইতো সামনের রবিবার পর্যন্ত আছি।
-আচ্ছা, এর মধ্যে দেখেন যদি মনের পরিবর্তন করতে পারেন তাইলে এইখানেই থাইকেন, আসলে আপনারে আমাদের ভালো লাগছে তাই ছাড়তে চাইনা।
রাশেদ সাহেব মনে মনে ভাবলেন এই কথাটা আগে থেকে ভাবলেই হোত। তাহলে এত গালাগালি কেন? এখন আর সম্ভব নয়, আমি যে ওখানে কথা দিয়েছি ওই লোক অপেক্ষা করবে।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment