নক্ষত্রের গোধূলি-[১২৫]-৪১

 ৮৫।
কাজের শেষে উপরে এসে দেখে প্রবীণ বসে সিগারেট টানছে। নেপালি বলে ওরা কেও যেমন একে কাছে টানে না তেমনি এও ওদের সাথে তেমন মিশতে চায় না। কাজের শেষে কখনও নিচে যায় শুধু টিভি দেখার জন্যে। কিছুক্ষণের
জন্যে যায়, খবর দেখেই চলে আসে।
-আরে ভাইয়া আইয়ে আইয়ে বলিয়ে কিয়া খবর হ্যা, আমিতো আপনার জন্যে বসে আছি নিচে যাচ্ছি না ভাইয়া লন্ডন থেকে কি খবর নিয়ে এলো তাই জানার জন্যে বসে আছি। রাশেদ সাহেব সব কিছু খুলে বললেন
-বাহ! বহুত আচ্ছা হুয়া ঠিক কাম কিয়া। আমিও নোটিশ দিয়েছি থাকব না এখানে।
-কেন তুমি কেন থাকবে না?
-না আমারও ভালো লাগছে না, জায়গাটা খুবই নীরব। তাছাড়া এখানকার মানুষ গুলিও কেমন যেন কথা বলতে চায় না, আশেপাশে একটা পাবও নেই।
-কেন ওইতো পাব, আর ওদিকে রাস্তার মোড়েও আছে দুইটা।
-আরে না না এগুলি কি পাব? জানেন, একটাতেও ডান্স হয়না। ডান্স না হলে কি পাব হয়? এর চেয়ে একটু বড় শহরে থাকে ওইসব পাবে ডান্স করা যায়ডান্সের জন্যে বারের পাশে আলাদা ফ্লোর থাকে। এরকম ছোট শহরেও থাকে কোথাও, কিন্তু এখানে নেই। এছাড়া আরও আছে যেখানে টিকেট করে ঢুকতে হয়। আবার কোথাও আছে যেখানে আপনাকে আগে থেকে মেম্বার হতে হবে। মেম্বার কার্ড ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিবে না। আমি সব অফ ডেতে পাবে যাই। ড্রিঙ্ক করি ডান্স করি কিন্তু এখানে একদিনও যাইনিনা ভুল হলো, একদিন গিয়েছিলাম শুধু তিন পাইন্ট বিয়ার খেয়ে চলে এসেছি। ডান্স নেই কে যায় এখানে? এই পাব বুড়োদের জন্যে। বড় বড় পাবে দেখবেন গেটে দুই তিন জন বাউন্সার থাকে। কেও যদি বেশি গিলে মাতলামি করে তখন বাউন্সারেরা ধরে বের করে দেয়।
-মাতলামি করে কেও?
-কি যে বলেন! মাতলামি মানে যা করে না দেখলে বুঝবেন না। টানাটানি মারামারি থেকে শুরু করে ভাঙ্গাচুরা সবই হয়। তখন বাউন্সারে কুলায় না রীতিমত পুলিশ ডাকতে হয়। আপনিও চলে যাচ্ছেন আমিও চলে যাচ্ছি নয়তো আপনাকে একদিন অক্সফোর্ড নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে আনতাম তখন বুঝতেন।
-হ্যাঁ এতক্ষণে বুঝলাম কেন থাকবে না, কাজ পাবে?
-আরে, কি বলেন ভাইয়া, কত কাজ! জানেন এদেশে এই রকম পনের থেকে বিশ হাজার রেস্টুরেন্ট আছে। তার মধ্যে থেকে লন্ডন সিটিতে অথবা আশেপাশে যে কোন একটায় কাজ পেয়ে যাব। হয়তো দুই একদিন বসে থাকতে হবে। আমার জন্যে ভাববেন না। আমি কোথাও স্থির হতে পারি না, কোথাও দুই তিন মাসের বেশি থাকতে পারি না। তবে ভাইয়া আমি যেখানেই যাই আপনার কথা আমার মনে থাকবে। আপনি ফোন নেননি তাহলে নম্বর নিয়ে আপনার সাথে যোগাযোগ রাখতাম। আচ্ছা আচ্ছা এক কাজ করেন আমার নম্বর রাখেন যোগাযোগ রাখবেন।
-হ্যাঁ প্রবীণ তোমার কথাও আমার মনে থাকবে অন্তত যতদিন এদেশে থাকবো তত দিনতো মনে থাকবেই।
-প্রবীণ উঠে এসে বললো  দেন আপনার নোট বইটা দেন।
-নোট বই মানে?
-মানে ঐ যে আপনি যে কাল রঙের ছোট্ট বই দেখে ফোন করেন যার মধ্যে সব কিছু লেখা। আমি দেখেছি, ওটা দেন।
পকেট থেকে ঠিকানা আর ফোন নম্বরের ছোট্ট বইটা এগিয়ে দিল। প্রবীণ তার নিজের ফোন নম্বর সহ নেপালের কাঠমুন্ডুর বাড়ির ঠিকানা ফোন নম্বর সব লিখে বইটা ফিরিয়ে দিয়ে বললো -
-আমি আশা করি অতি অল্প দিনেই আপনার সব সমস্যার সমাধান হলে দেশে ফিরে যাবেন। সেখান থেকে একবার ভাবীজীকে সাথে নিয়ে নেপালে আমার বাড়ি যাবেন। আশা করি তত দিনে আমিও দেশে ফিরে যাব। আবার দেখা হবে আমাদের, সবারই ভালো লাগবে। আপনাকে কাঠমুন্ডুর বিখ্যাত তাতো পানি নিয়ে যাব সেখানে মাটির নিচে থেকে গরম পানি বের হয়, সেখান থেকে চিন দেখা যায়, দেখবেন। এখানে যে যন্ত্রণা সহ্য করছেন দেশে ফিরে ভাবীজীকে সাথে নিয়ে কিছুদিন দূরে কোথাও বেড়ালে সেটা ভুলে যাবেন। আপনার কাল রাত্রি শেষ হয়ে আবার নতুন করে সানরাইজ হবে আপনি আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করবেন, আমার বাবা যেমন করেছিলো। এখান থেকে ফিরে আমার মাকে নিয়ে আপনাদের কক্সবাজার গিয়েছিলো। আমরা তখন ছোট, তবুও আমার পরিষ্কার মনে আছে, আমরা দাদার কাছে ছিলাম। [চলবে]

No comments:

Post a Comment

Back to Top