নক্ষত্রের গোধূলি-[১২৫]-২৬

 ৫২।
-এখানে লোক জন এই ভাবেই কথা বার্তা বলবে কিছু মনে করবেন না এখানে এই রকমেই চলে।
কবির মালামাল গুলি দেখিয়ে বললো-
-যখন এই সব জিনিস নিতে বলব তখন এখান থেকে নিয়ে যাবেন।
আপনাকে দেখেই বুঝেছি আসলে এই কাজ তো আপনার জন্য না কিন্তু কি করবেন এসেই যখন পরেছেন করতে তো হবে। আমি আপনাকে সব দেখিয়ে দিবো আজ তো শুক্র বার আজ কোন রকমে চালিয়ে নেন। শুক্র আর শনি বার এখানে খুব বিজি হয় সবাই ব্যস্ত থাকে সবার মাথা গরম থাকে তাই কে কি বলে না বলে হুস থাকে না। এই দুই দিনেই যত ব্যস্ত সপ্তাহের অন্য দিনে কিন্তু এত ব্যস্ত থাকবেনা।
রাশেদ সাহেব এতক্ষণে শুক্র বারের মহাত্ম বুঝতে পারলেন।
-এই যে দেখে নেন এখানে কি কি আছে। আন্দাজে খোঁজা খুঁজি করবেন না, সময় নষ্ট হবে এতে সেফ বা সবার মেজাজ গরম হবে। ওই যে কিচেনের পিছনে যে স্টোর ওখানে কি থাকে এখানে কি থাকে এগুলি মনে রাখবেন বলার সাথে সাথে নিয়ে দিবেন কাজ সহজ হবে কষ্ট কম হবে সময় কম লাগবে। দেখলেন তো এখন চলেন একটু রেস্ট নিবেন ও হ্যাঁ রোজা আছেন তো? আচ্ছা তা হলে আজকে তো তিনটা তেপ্পান্ন মিনিটে ইফতার তখন নিচে চলে আসবেন ইফতারের জন্য। আর রেস্টুরেন্ট খুলবে সারে পাঁচ টায় আপনি পাঁচ টায় নিচে নেমে আসবেন তখন বলে দিব এসে কি করতে হবে। আমি আপনার কাছেই থাকব।
-ভাই আমাকে বলে দিবেন কি ভাবে কি করতে হবে বুঝতেই তো পারছেন একেবারে নতুন এর আগে তো কখনও এমন কিছু করিনি।
-ভাববেন না এরকম হয় কে আর সব কিছু শিখে আসে এদেশে এখানে এসেই সবাই শিখে আমরা দেশে কি কেও কখন এই সব কাজ করেছি? হ্যাঁ আপনার কষ্ট হবে তবে আবার সুবিধাও আছে।
-কি সুবিধা?
-না মানে আপনি তো ইংরেজি পড়তে পারেন বলতে পারেন ইংরেজি পড়তে পারলে অনেক সুবিধা। চলেন উপরে চলেন ঠিক ঠাক করে নেন আবার কিন্তু পাঁচ টায় নামবেন দেখবেন ডাকাডাকি যেন করতে না হয়।
-আচ্ছা ঠিক আছে চলেন।
উপরে এসে সেই রুমে ঢুকে দেখে সবাই শুয়ে পড়েছে।
-আপনার মাল পত্র নিয়ে চলেন আমার সাথে।
লাগেজ দুটা তখন খুলতে হয়েছিলো সেটা আবার বন্ধ করে নিয়ে কবিরের সাথে উপরে উঠে এলো। এখানে নিচের ওই মাপের আর একটা রুম তবে এটির অবস্থা ওই রকম নাপ্রায় খালি আর ওই দুর্গন্ধটা নেই তবে ঘরটা ঠাণ্ডা মনে হলো। যাই হোক, এখানে দুইটা বিছানা।
-নেন এখানে এই বিছানা আপনার, ওই বেডে আমাদের এক ওয়েটার ভাই থাকে আপনি এখানে থাকবেন।
এই বলেই আচ্ছা পরে কথা হবে বলেই কবির চলে গেলো। কবির চলে যাবার পর রাশেদ সাহেব চোখ ঘুরিয়ে ঘরটা দেখে জানালার কাছে দাঁড়ালেন। বাইরেটা দেখা যাচ্ছে, যে রাস্তা দিয়ে সে এসেছেন। রাস্তার ওপাড়ে একটা লন্ড্রি, একটা পাব আর একটা রিয়েল এস্টেটের অফিসকয়েকটা গাড়ি ডান থেকে বামে, কয়েকটা বাম থেকে ডানে চলে যেতে দেখলেননা এভাবে দাঁড়িয়ে আমার তামাশা দেখার সময় নেই। ঘরের ভিতর একটা বড় গোল টেবিল আর একটা চেয়ার এই রয়েছে আসবাব। কোন আয়না নেই। ব্যাগ খুলে হেয়ার ব্রাশ, তামাকের প্যাকেট, লাইটার, ক্রিম লোসনের টিউব বের করে টেবিলের উপর রেখেই মনে হলো সিগারেটের ছাই ফেলার কিছু দরকার। এদিক ওদিক তাকাতেই একটা এ্যাশট্রে পেয়ে টেবিলের উপর এনে রেখে দুএকটা প্যান্ট সার্ট রাখার জায়গা খুঁজে না পেয়ে আর কিছু বের করলেন না। শুধু বিছানার ময়লা চাদর, বালিশের কভার বদলে নিলেনমনি দিয়ে গিয়েছিলো একটা চাদর আর দুই টা বালিশের কভার তাই দিয়ে। এগুলি বদলে একটু বিছানায় বসেছে ওমনি নিচে থেকে ডাক এলো-
-নয়া ভাইছাব নিচে আসেন ইফতারের টাইম হইছে।

রাশেদ সাহেব বের হলেনকোথায় বাথরুম টয়লেট দেখা হয়নি। দেখা দরকার। একটু চাপ বোধ হচ্ছে। সারাদিনে তো আর মনে হয়নি। রুম থেকে বের হয়ে যে পথে উপরে উঠেছি্লেন তার পাশ দিয়ে দেখে একটা প্যাসেজ। এগিয়ে যেতেই দেখলেননাহ, আর যাই হোক অন্তত টয়লেটটা পরিষ্কার আছে। ওখানে কাজ সেরে নিচে নেমে কিচেনে কাউকে দেখা গেল না কিন্তু পাশেই কোথাও কথার শব্দ পেয়ে বুঝল রেস্টুরেন্টের ভিতর হবে হয়ত। হ্যাঁ তাই, ওখানেই একটা বড় টেবিলে পাঁচ/ছয়জন ইফতারের আয়োজন করছে।
[চলবে]

No comments:

Post a Comment

Back to Top