নক্ষত্রের গোধূলি-[১২৫]-৩

৬।
রাশেদ সাহেব আর মনিরা কল্যাণপুর থেকে রাতের খাবার খেয়ে রাত প্রায় দশটায় ফিরলেন। ওদের দেখে আপা মুরগির মাংস আর খিচুড়ি রান্না করলেন।

রাশেদ সাহেব মনিকে ডেকে আড়ালে নিয়ে বললেন-
-কেন, তুমি নিষেধ করলে না কেন?
নিজের পকেটের স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে কারো বাড়িতে খেতে মন চায় না তা মনি জানে কিন্তু আপার খিচুড়ি রাশেদ সাহেবের খুব প্রিয় বলে আর অমত করেনি।
রাতে শোবার পর বললেন-
-আচ্ছা মনি বলত এভাবে আর কত দিন চলতে পারে? এভাবে তো জীবন চলে না! মেয়েদের লেখা পড়া কি বন্ধ হয়ে যাবে?
-তুমি যে রিজাইন করেছ ওখানে একটু খোঁজ নিয়ে দেখ।
মনি তার স্বামীর আত্মসম্মান বোধ সম্পর্কে ভালো করেই জানে। তবুও বললো-
-জানি তুমি রাজী হবে না তবে আমার মনে হয় তোমার সাবেক বসরা তো তোমাকে আসতে নিষেধ করেছিলো, দেখ না একবার একটু জিজ্ঞেস করে। না হলে বল আমিই ফোন করে বলি।
-না মনি তা হয় না। এই বেকারের দেশে অমন চাকরি কি আর এতো দিন খালি পরে রয়েছে? শুধু শুধু ফোন করে খারাপ কিছু শোনার চেয়ে না করাই ভালো। আমি যতটা শুনে এসেছিলাম তাতে মনে হয় ওখানে হাসান সাহেবকে প্রমোশন দেবার কথা ছিলো
-কোন হাসান সাহেব?
-তুমি চেন না, ওই জাকিরদের সাথে ছিলো।
-তুমি একটু বলেই দেখ না!
-আচ্ছা ঠিক আছে কাল মনে করে দিও।
পরদিন সকালে ফোন করলেন তার সাবেক বসের কাছে।
-আরে রাশেদ সাহেব আমি তো আপনাকে কতবার নিষেধ করেছিলাম তবুও আপনি চলে গেলেন। আমি তো জানি এদেশের ব্যবসার কি অবস্থা তখন তো আপনি আমার কথা শুনলেন না। আমরা তো এই মাত্র মাস দুয়েক আগে হাসানকে প্রমোশন দিয়ে ওখানে নিয়ে নিয়েছি। আর দুইটা মাস আগে খোঁজ নিলে অবশ্যই আপনাকে নিয়ে নিতাম।

-তাহলে তোমার তো জাহাজে চাকরি করার সার্টিফিকেট আছে, সেখানে একটু দেখবে?
-হ্যাঁ এটা করা যায়। দেখি রফিকের কাছে একটু আলাপ করে দেখি এখানে কি অবস্থা। কিন্তু ওর তো কোন ঠিকানা বা ফোন নম্বর জানি না তবে নারায়ণগঞ্জে থাকে এই জানি। আমাকে একবার ওখানে যেয়ে খুঁজে বের করতে হবে।
-তাহলে যাও দেখ পাও কি না।
-পাব, ওখানে গেলে অবশ্যই খুঁজে পাব। হঠাৎ একটা কথা মনে হলো, তোমার শরীফ স্যারের কথা মনে আছে?
-হ্যাঁ।
-উনি এখন ওখানে নেই, ঢাকায়ই আছে এখানে অন্য একটা অফিসের হেড, তার সাথে একবার দেখা করে আসি।
-তাই যাও উনিও তোমাকে খুব পছন্দ করতেন।
-তাহলে এখনই যাই।

৭।
অফিস খুঁজে পেতে কোন অসুবিধা হলো না, কারওয়ান বাজারে একটা বিল্ডিং এর চার তলায় উঠে অফিসে ঢুকেই দেখলেন তার পুরনো সহকর্মী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মকসুদ সাহেব এক টেবিলে বসে ড্রইং দেখছে। পায়ের শব্দ পেয়ে তাকিয়েই-
-আরে রাশেদ সাহেব আপনি এখানে? কি ব্যাপার? বসেন।
বসে রাশেদ সাহেবও অবাক।
-তাহলে আপনি রিজাইন করে এখানে এসেছেন?
-হ্যাঁ।
-ও আচ্ছা, শরীফ স্যার এখানে না?
-হ্যাঁ এখানেই, দেখা করবেন? তাহলে যান স্যার রুমেই আছে। আসেন পরে চা খাই।
-হ্যাঁ তাই।
স্যারের রুমে ঢুকতে যাবার আগে কে যেন পিছন থেকে ‘স্যার বলে ডেকে সালাম দিল, পিছনে ঘুরে দেখে তাদের অফিসের এক পিওন।
-বারেক মিয়া তুমি এখানে?
-হ্যাঁ স্যার আমি একা না ওই তো বাসার সাহেব সহ আরও কয়েক জন চলে এসেছিলাম।
 স্যারের পিএ বাসার সাহেবের রুমে উঁকি দিলেন। বাসার সাহেব উঠে সালাম দিয়ে বললো
-স্যার আপনি?
-এইতো আপনাদের দেখতে এলাম, আমি জানতাম কেও কেও এখানে এসেছেন তবে কে কে এসেছেন তা জানতাম না। যাক কেমন আছেন সবাই?
-হ্যাঁ স্যার ভালই আছি। স্যারের সাথে দেখা করবেন?
-হ্যাঁ আসলাম যখন একটু দেখেই যাই।
-যান স্যার আছেন।
পর্দা সরিয়ে উঁকি দিতেই স্যার হাসি মুখে উঠা দাঁড়ালেন,
-আরে রাশেদ! এসো এসো বস। তারপর বল কি খবর, কি করছ, কেমন আছ সব বল।
রাশেদ সাহেব কোথা থেকে শুরু করবেন ঠিক বুঝতে পারছিলেন না। এদিকে চুপ করে কতক্ষণই থাকা যায়? যা বলতে এসেছেন তা যে তাকে বলতে হবে। ভাবছেন।
এমন সময় স্যার নিজেই প্রশ্ন করলেন-
-তুমি ব্যবসা করবে বলে রিজাইন দিয়ে এসেছিলে না?
-হ্যাঁ স্যার।
-তা কি অবস্থা?
-না স্যার সুবিধা করতে পারলাম না, বলে এবার আস্তে আস্তে সব কিছু গুছিয়ে বলে সর্ব শেষে তার আসল কথাটা বললেন। এখন কি করি, আপনার এখানে কোন ব্যবস্থা করে দেন স্যার, আর কিছু করার দেখছি না।
-হু বুঝলাম, কিন্তু তুমি এমন সময় এসেছ তোমাকে আমি এখন কোথায় প্রোভাইড করি, আমি নিজেই আর মাত্র দেড় মাস আছি এর পরেই এলপিআর এ চলে যাচ্ছি। এই সময়ের মধ্যে কিছু করতে পারব বলে মনে হয় না।
এর পর আর কিছুক্ষণ থেকে টুকিটাকি কিছু কথা বার্তা বলে বেরিয়ে এলেন।
[চলবে]
Back To Home

No comments:

Post a Comment

Back to Top