অফিসে বা কলকারখানায় কাজের সময়

আমাদের এই বেকারের দেশে নিজের ক্ষুধা নিবারণের জন্য, পরিবারের ভরন পোষণের জন্য, সাময়িক সুখের সন্ধানের জন্য লক্ষ লক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা নেয়া বা এক কথায় বলা যায় দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত যুবক যুবতী একটি কর্ম সংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে না।
হ্যাঁ এ কথা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের অভাব রয়েছে বা কেহই এই কারিগরি শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী নয়। তারচেয়ে অফিসে বসে কলম ঘষাঘষি করাতেই তৃপ্তি। হাতের কাজ? সেতো ভাবতেও ঘেন্না করে!
আবার আর এক দিকে যারা বিশেষ কোন ভাবে, সে পিতার সম্পত্তির জোরে কিংবা আত্মীয়তার জোরে কিংবা চাটুকারিতার জোর যেভাবেই হোক কর্মক্ষেত্র তৈরি করে নিতে পেরেছে বা অন্যের কর্মক্ষেত্রে বস হয়ে বসেছে তারা নিজেরা না জুটিয়েছে শিক্ষা না পেয়েছে দীক্ষা। এমনকি ভদ্রতা সভ্যতা বা আদব-কায়দা বলতে কি বোঝায় তাই শিখতে পারেনি! কার সঙ্গে কি ভাবে কী কথা বলতে হয় জানে না। তারা উপযুক্ত কাজের জন্য অপ্রাসঙ্গিক জনকে নিয়োগ দিয়ে কাজের বারোটা বাজিয়ে দেন। মালিক বা বস নিজেই জানে না এই কাজের জন্য উপযুক্ত কর্মী কে? তার কি যোগ্যতা প্রয়োজন। যেমন ডাক্তারকে নিয়োগ দিচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারের পদে, ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়োগ দিচ্ছে পরিবহন কাজের এস্টিমেট করার কাজে আবার প্রশাসনিক কাজ দেখার জন্য নিয়োগ দিচ্ছে হিসাব বিজ্ঞান পড়া লোককে আবার ট্রাক মালিকের সুপারভাইজারকে নিয়োগ দিচ্ছে জাহাজ পরিচালনার কাজে। এর ফলাফল কি হচ্ছে তা আমরা চারিদিকেই দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে ব্যাক্তি মালিকানার অফিসগুলিতে মালিক কোন রেকর্ডপত্র রাখা বিপদজনক বা তার নিজের অপকর্ম ফাঁস হয়ে যাবার ভয়ে রাখে না। তাই যখন যা সুবিধা মনে হয় তাই, সত্যকে মিথ্যা বা মিথ্যাকে সত্য বলে চালিয়ে নেয়ার ইচ্ছা বলেই এমন করে।
একজনকে দিয়ে ৫ জনের কাজ আদায় করে নেয়া একটা যোগ্যতা এবং শিল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। মালিকের মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষে একজনকে দিয়ে যদি পাঁচ জনের কাজ আদায় করিয়ে নেয়া যায় মন্দ কি? আল্লাহত’আলা কাজকর্ম কিংবা জীবন ধারণ কিংবা খেয়ে পরে জীবন বাঁচাবার জন্য দিনকে নির্ধারণ করেছেন আর বিশ্রামের জন্য রাত। এই বিধান কি জন্য করেছেন? এমনিতেই ধীরে ধীরে মানুষের মন, মানসিকতা, বিবেক, ধৈর্য-সহ্য অর্থাৎ মানবিক গুণের পচন ধরছে। এগুলি দেখার মত বা উপযুক্ত বিচার করার মত ব্যবস্থা থাকলেও তা মানা হয় না। শ্রম দপ্তর নামে একটি দপ্তর নামে থাকলেও কাজে এর কোন অস্তিত্ব নেই সম্ভবত তাহারা সরকারি অর্থের সদ্ব্যবহারে ব্যস্ত থাকেন। প্রতিদিন একজন কর্মচারীকে মাত্র এক ঘন্টা (বাস্তবে এর চেয়েও অনেক বেশি হয়ে থাকে) বেশি কাজ করিয়ে নিলে মাসে ২৬ ঘন্টা আদায় করে নেয়া যায়। অর্থাৎ মাসে ৩ দিনেররও অধিক সময় বিনে পয়সায় কাজ আদায় করে নিচ্ছে এই সব মুনাফা লোভীরা। বিনিময়ে হয়তবা কেও কেও (সবাই না) ৫*২= ১০ টাকার দুইটা সিঙ্গারা খাইয়ে দিলেই হলো। বাহ! কি মজা! তাকধিনা ধিন ধিন!
যিনি কাজ করবেন তাকে দিয়ে কাজ করাতেই থাকবে, লাথি গুঁতা, চোটপাট সবই তার প্রাপ্য কিন্তু প্রমোদে মন ঢালিয়া যারা অফিসে বসে facebook চালাইবেন বা you tube এ সিনেমা দেখিবেন তিনিই উত্তম এবং যোগ্য কর্মচারী বলে বিবেচিত হবেন, সবসময় বাহবা পাবেন, এমনটাই কি রীতি?
সরকার যখন তার কর্মচারীদের পে-স্কেল বাড়িয়ে দিচ্ছেন তার ফলে সারা দেশে সমস্ত কিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু সরকার শুধুমাত্র ২০/২৫ লক্ষ মানুষের কথা ভেবে অস্থির অথচ বেসরকারি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করে তাদের বেতন স্কেলের কথার কোনও উল্লেখ থাকে না তাহলে কি চাকুরীজীবী বলতে ওই সরকারি কর্মচারীদেরকেই বোঝায়? এমনিতেই বেসরকারি কর্মজীবীরা নিয়মিত ভাবে বেতন তো পায়ই না বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট তো দূরের কথা। ৫/৭ বছর চাকরি করেও ইনক্রিমেন্টের কোন দেখা নেই। তাহলে তারা সরকারি চাকুরেদের সাথে তাল মিলিয়া সংসার কি ভাবে ম্যানেজ করছে? এর জবাব কি কেও কোনদিন ভেবে দেখেছে না ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেছে?
কর্মক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করাটাও যেমন যোগ্যতা আবার সময়ের কাজ সময়ে করতে না পারাটাও অযোগ্যতা এমন করে কি কেও ভাবেন? দিনে কাজ করবে রাতে বিশ্রাম নিবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু যারা সন্ধ্যার পর অফিসে বাতি জ্বালিয়ে কাজ করে তারা কারা? কেন করে এমন? টেবিলে ফাইল, কাগজপত্র এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে চিঠিপত্র নির্দিষ্ট ফাইলে না রেখে যেখানে খুশী সেখানে রেখে সময়মত খুঁজে না পাওয়াকে মালিক বা বস মনে করে এরাই ব্যস্ত মানুষ, এরাই ভাল কাজ করছে! ইহা কি যথেচ্ছাচারিতা নয়?
অফিসে রাতে বাতি জ্বালিয়ে কাজ করে কে?
১। যারা সময় মত নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করতে পারে না।
২। যার ঘরে শান্তি নেই অর্থাৎ সহজ কথায় স্ত্রীর সাথে বনিবনা নেই।
৩। যারা নিজের কাজ কি এটাই বুঝতে পারে না।
৪। যারা কাজের সময় আড্ডা দিয়ে সময় কাটিয়ে সময় নষ্ট করে।
সময়মত অফিসের কাজ শেষ করে সময়মত বাড়িতে ফিরে এসে নিজের পরিবারকে সময় দেয়া, তাদের সাথে সুখ দু:খের কিংবা কোন স্বপ্ন দেখা বা কোথাও বেড়াতে যাওয়া, বাড়ির বাজার বা প্রয়োজনীয় কেনা কাটা করে, চিকিৎস্য করে, প্রয়োজনীয় ওষুধ-পথ্য কিনে এনে পরিবারের স্ত্রী-সন্তানদের ভালবাসা স্নেহ-মমতা নিয়ে রাতে ভাবনা হীন একটা সুখ নিদ্রা দিয়ে ভোরে এক্কেবারে তরতাজা হয়ে উঠতে পারে তাহলে যে সে কতখানি কর্মশক্তি যোগাতে পারে তা কেই এই মহাপন্ডিত জন মালিক বা কথিত এই বস সম্প্রদায়ের রোবটগুলি বুঝতে পারে না সে প্রশ্নের জবাব কে দিতে পারে?

No comments:

Post a Comment

Back to Top