লেডিস ফার্স্ট


টোনা এবং টুনির মাঝে গভীর প্রেম। কেও কাওকে ছাড়া থাকতে পারে না। এমনকি তারা এক সাথে থাকবে বলে একই কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছে যাতে করে অন্তত কাজের সময় দুইজনকে খুব একটা বেশী সময় ধরে দূরে থাকতে না হয়।
একদিন তারা উভয়ে কাজ শেষ করে একটা পাব এ গিয়ে বসল অনেকদিন পরে দুই জনে এক সাথে একটু সুরা পান করবে।

টোনা জিজ্ঞেস করল তুমি কি খাবে?
একটু সাদা ওয়াইন হলেই হবে।
টোনা টুনির ইচ্ছা জেনে বার কাউন্টারে গিয়ে টুনির জন্য একটা সাদা ওয়াইন আর নিজের জন্য এক পাইন্ট লাগার নিয়ে এসে টুনির পাশে বসে ওয়াইনের গ্লাসটা টুনির দিকে এগিয়ে দিল।
চিয়ার্স করে একটু একটু চুমুক দিচ্ছে আর অতীত, ভবিষ্যৎ বর্তমান নিয়ে নানা রকম গল্প করছে আর গ্লাস ফুরিয়ে গেলে আবার বার এ গিয়ে নতুন করে গ্লাস ভরে আনছে। এভাবে অনেকক্ষণ ধরে অনেক পান করে সবারই মাথা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল।
টোনার সামান্য এক কথায় টুনি এমন রেগে গেল যে আত্মবিসর্জন দিবে বলে টোনাকে জানিয়ে দিল।
এতদিন ধরে আমরা একসাথে রয়েছি আর আজ তুমি আমাকে এই কথা বললে? আমি আর বেচে থাকতে চাই না। বলেই পাব ছেড়ে ঝরের মত বের হয়ে গেল।
তার পিছনে টোনা অসমাপ্ত গ্লাস ফেলে দৌড় দিল।
টুনি দৌড়ে একটা ট্যাক্সি নিয়ে তাতে উঠতে যাবে এমন সময় টোনাও টুনির সাথে ট্যাক্সিতে উঠেই বলল টুনি প্লিজ তুমি একা যেয়ো না দরকার হলে আমরা একসাথেই মরব।
এর মধ্যে টুনি ড্রাইভারকে বলল কাছের পাহারের নিচে যেতে, গন্তব্য শুনেই ড্রাইভার পাহারের দিকে ফার্স্ট গিয়ার, সেকেন্ড গিয়ার, থার্ড গিয়ার এবং অবশেষে ফোর্থ গিয়ারে দিয়ে ফুল স্পীডে ছুটে চলল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই পাহারের নিচে এসে উপস্থিত।
টুনি পার্স খুলে মিটার দেখে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে দুর্বার গতিতে পাহার বেয়ে উপরে উঠছে আর তার পিছু পিছু টোনাও।
পাহারের চূড়ায় উঠে টোনা বলল চল আমরা একসাথে লাফ দেই!
না, পাব থেকে যেমন আমি আগে বের হয়েছি তেমনি আমি আগে লাফ দিব।
না না তা কি করে হয়? তার চেয়ে আমিই আগে লাফ দেই।
না, আমি আগে লাফ দেব।
না, তা হতেই পারে না, আমি বলছি চল আমরা এক সাথে হাত ধরে লাফ দেই।
অসম্ভব, আমার পক্ষে তোমার হাত ধরা আর সম্ভব নয়।
তাহলে ঠিক আছে, দেখ আমিই আগে লাফ দিচ্ছি কারণ আমি সত্যিই তোমাকে খুব ভালবাসি।
বলেই টোনা লাফ দিল আর অবধারিত ভাবে নিচে পরে গিয়ে মৃত্যুর সাথেই আলিঙ্গন করল। টুনি যেমন পাহারের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ছিল তেমনি দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে টোনার মৃত্যুর দৃশ্য দেখে নিশ্চিত হয়ে আস্তে আস্তে পাহার থেকে নেমে বাসায় ফিরে গেল।
ঘটনাক্রমে ওই পাহার চূড়ায় এক দাঁড়কাক বিকেল বেলা হাওয়া খেতে এসেছিল এবং টোনা টুনির এই কথোপকথন এবং তাদের কার্যকলাপ সবই দেখছিল শুনছিল। তবে সে ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি যে, টোনাই আগে লাফ দিবে। দাঁড়কাক ভাবল এভাবে যদি টুনি টোনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে তাহলে একটা কথা চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে যে, “লেডিস ফার্স্ট” তাহলে মহিলারা অত্যন্ত পুলকিত হবে এবং অন্তত তারা আর এভাবে কারো সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার সুযোগ পাবে না।

No comments:

Post a Comment

Back to Top