নক্ষত্রের গোধূলি-[১২৫]-২২

৪৫।
রাশেদ সাহেব বা মনিরা কেও আর কোন কথা বলতে পারেনি তবে কারো চোখে ঘুম আসেনি। শুয়ে শুয়ে উভয়েই যার যার মত করে ভাবনার একই স্রোতে সাঁতরিয়ে ব্যর্থ কূলের সন্ধান করেছে। ভোরের ট্রেনের শব্দ পেয়ে মনি বিছানায় উঠে
বসে রাশেদ সাহেবকে ডাকল। রাশেদ সাহেব জেগেই ছিলেন। সারা রাত নানা চিন্তা এসে মগজের অলিতে গলিতে ইচ্ছে মত ঘুরে বেড়িয়েছে। মনি চলে যাচ্ছে ও একা এই পথ কেমন করে পাড়ি দিবে বিশেষ করে কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে ট্রান্সফার হবে কি ভাব? সে নিজেই বা এদেশে বে আইনি ভাবে আর কত দিন থাকতে পারবে?  ছোট ভাইয়ের বাসায় তাদের একদিনের জন্যও জায়গা হলো না, দেশ থেকে ছয় হাজার মাইল দূরে এসে এই দেখবে তা কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।

কেন এমন হয়েছে এই ভেবেই অস্থির, কোন কূল কিনারা পায় নি। সে কি মানসিক ভারসাম্য হারাতে বসেছে? মনি চলে যাচ্ছে কে তাকে এই সান্ত্বনা দিবে? তাকে কে দেখে রাখবে? মনিকে যতই বলুক তুমি চিন্তা করো না। আসলে যে সে নিজে কিছুই সামাল দিতে পারবে না তা সে ভাল ভাবেই জানে। সেদিন মনিকে এই কাটা ঘায়ে মলম লাগাবার কথা বললেও এই কি মন থেকে মুছে যায়? নাকি এটা মুছে যাবার ব্যাপার? আপন ছোট ভাইয়ের এই রূপ যে কোন দিন কল্পনাও করতে পারেনি। এমন কি হবার কথা ছিলো? কোন জবাব খুঁজে পায় নি। এ আবার কি ধরনের পরীক্ষা! এ যে দেখছি চরম পরীক্ষা। এই পরীক্ষার আগুনে যে সে জ্বলে পুরে ছাই হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই কয়েক দিনেই যেন তার বয়স বিশ বছর বেড়ে গেছে।
মনি জিজ্ঞেস করলো-
-সারা রাত ঘুমাও নি, তুমি কি ওই কথা ভাবছ, ও কথা ভেবে কি হবে? আর ভেবো না। নিজেকে শক্ত কর, মন শক্ত কর। মনে কর এটা আমাদের প্রাপ্য ছিলো। আজ যদি তুমি ব্যবসায় ক্ষতি না দিয়ে ভাল লাভ করে লক্ষ লক্ষ টাকা তোমার হাতে থাকত তাহলে এমন হোত না। আর ভেবো না চলো রেডি হও।

দুজনেই উঠে রেডি হয়ে মালপত্র নিয়ে নিচে নেমে এলো। আজ কেওই রোজা রাখে নি। সকালের নাস্তা খেয়ে বিদায়ের পালা। মনিরা ভাবীকে জড়িয়ে ধরে বললো-
-ভাবী, জানিনা কোন পূণ্যের ফলে নিয়তি আমাদেরকে টেনে আপনাদের কাছে নিয়ে এসেছে। আপন হলো পর আর যাকে কোন দিন দেখিনি, যার কথা কোন দিন শুনিনি সেই হলো আপন, এই বুঝি পৃথিবীর নিয়ম।
বলেই কেঁদে ফেলল। সে কান্না শেফালির মধ্যেও সংক্রমিত হলো। দুজনেই কাঁদছে। বিদায় এমনিতেই কঠিন, বিশেষ করে যেখানে মায়ার বন্ধন থাকে। মন কিছুতেই মেনে নিতে পারে না।
তবুও যেতে হয়, চলে যায়। মনিরা ফিরোজের মায়ের কাছে গিয়ে বললো-
-ফুফু আম্মা, ও তো রইল, ওকে দেখবেন, মাঝে মাঝে এখানেই আসতে বলেছি। ওর কোন জায়গা রইলো না, সবই বন্ধ হয়ে গেলো। ও এখানে এলে আপনি দেখবেন। ফিরোজ ভাই, আপনাকেও একই কথা বলছি। মানুষটা একে বারে শিশুর মত সরল, কিচ্ছু বোঝে না। আজ ছাব্বিশটা বছর ধরে আমি এই চালিয়ে আসছি। প্রয়োজন হলে একটু জায়গা দিবেন। আমি জানি এদেশে আপনি অন্তত মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবেন না।
[চলবে]

No comments:

Post a Comment

Back to Top