রেশমি-[৩]-১


১।
ভরা ভাদ্র মাস। নদী নালা খাল বিল জলে থৈ থৈ করছে। ইছামতী নদীও তেমনি থৈ থৈ করছে। ছলাত ছলাত বৈঠা বেয়ে কত নৌকা চলে যাচ্ছে, কোনটা পশ্চিমে মালচি, বাল্লার দিকে আবার কোনটা পুবে হরিণা, হরিরামপুরের দিকে।
কোনটায় আবার লাল নীল রঙ বেরঙের পাল তুলে মাঝি শুধু পাছা নায় হাল ধরে ভাটিয়ালি সুর তুলে দূরের কোন গায়ের নাইয়রি নিয়ে যাচ্ছে, ছৈয়ের সামনে পিছনে একটু খানি কাপড় দিয়ে পর্দা দেয়া। জনাব আলি নদীর পাড়ে বসে বিড়ি
টানছে আর তাই দেখছে।
দেড় দুই মাস হলো এই ইছামতীর পাড়ে ঝিটকা বাজারের ঘাটে তারা লগি গেড়েছে। নদীর পাড়ে বাজারের পরেই ইউনিয়ন অফিস তারপরে হাইস্কুল। হাইস্কুলের পাশেই প্রাইমারি স্কুল। হাই স্কুলের সামনে নদীর পাড়ে বিশাল এক কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচেই জনাব আলি বসে আছে অনেকক্ষণ ধরে।
দেখতে দেখতে পশ্চিম আকাশ লাল হয়ে আসছে, সূর্যটা কিছুক্ষণের মধ্যেই ডুবে যাবে। এর মধ্যে তাদের বহরের কোন কোন নৌকায় হারিকেন ঝুলিয়ে দিয়েছে। বাজারের ঘরে ঘরে বাতি দিয়ে দিয়েছে। দুই পাড়ের গ্রামেও দুই একটা বাড়িতে আলো দেখা যাচ্ছে। আর একটা বিড়ি জ্বালাল। কিছুতেই উপযুক্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না।
অন্ধকার হয়ে আসার আগেই ছোট মেয়ে কলি ডাকতে এলো
খেপতে, (বাবা) নায় যাইবা না? এহানে আর কতক্ষণ বইসা থাকবা? চল নায় চল আমরি (মা) চিন্তা করতেছে, ভাত খাইবা চল।

বলেই হাত টেনে উঠিয়ে দিল। মেয়ের পাশে পাশে হেটে এসে পা ধুয়ে নৌকায় উঠল। নৌকার এক পাশে ব্যবসার বিক্রির জিনিস পত্র আর এক পাশে সংসারের জিনিস পত্র। মাঝে শোবার জায়গা। পিছনে গলুইর কাছে রান্নার আয়োজন। জনাব আলির বহরের অধিকাংশই বেচাকেনা করে। হরেক রকম চুরি, আলতা, মেন্দি, মালা, কানের দুল, মাথার ক্লিপ, মুখ দেখার ছোট আয়না, চিরুনি, উকুনের চিরুনি, কপালের টিপ, কাজল, বাচ্চাদের খেলনা এমনি কত কি! আবার কেও কেও শিঙ্গা লাগানো, দাঁতের পোকা বের করা, তাবিজ কবচ ঝাঁর ফুকের কাজও করে। সাপ ধরা, সাপের খেলা দেখান, সাপের ব্যবসা করা, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা, জাদু দেখানো, মাছ ধরা, বানর খেলা দেখানো, পাখি শিকার ইত্যাদি। এদের মধ্যে দুই একজন যে এদিক সেদিক কিছু করে না সে কথা বলা যায় না। নানা জনে নানা রকম ফন্দি ফিকির করে তবে তা জানাজানি না হলে কেও আর ও নিয়ে মাথা ঘামায় না।
ঝিটকা বাজারের পুঁটি মাছ আর করল্লা দিয়ে চচ্চড়ির মত করেছে। জনাব আলি কি খাচ্ছে সেদিকে তার মন নেই। খেতে বসেও ভাবছে দেখে জয়নব বেগম তাড়া দিল
কি হইছে, এমনে ভাবলেই হইব? মাইয়ারেতো আর গাঙ্গে ফালাইয়া দিতে পারুম না। আমি কই কি চল আমরা এহান থিকা চইলা যাই। অনেক দিনতো হইল, আর কত দিন এই ঘাটে থাকুম?
বলেই স্বামীর মুখের দিকে তাকাল কিন্তু তার মুখের কোন ভাবান্তর দেখতে না পেয়ে একটু হতাশ হলো।
জনাব আলি শুধু জিজ্ঞেস করল
রেশমি কনে?
আছে ওই নায়
কি করে?
কি আর করব, হুইয়া রইছে
খাইছে?
হ, তুমি আহার আগেই খাইয়া গেছে।

২।
জনাব আলির নৌকার বহর ইছামতী নদী দিয়ে যাচ্ছিল, ওদের ধারনা ছিল হরিরামপুর যাবে কিন্তু পথে রাতে অমাবস্যার অন্ধকারে পথ দেখতে না পেয়ে ঝিটকার কাছে দিয়ে যাবার সময় কি মনে করে এই ঘাটেই ভিড়িয়ে দিল।
কি হইল জনাব ভাই, থামলা কেন?
ভিড়া, এই ঘাটেই দেইখা যাই।
এইতো, সেই থেকে তারা এখানেই আছে আজ প্রায় দুই মাস। বেদেরা সাধারণত কোন ঘাটে এত দিন থাকে  না কিন্তু এখানে ভাল ব্যবসা হচ্ছে বলে কেমন করে যেন রয়ে গেল। ঘাটে বাধার পরের দিন সবাই যার যার ঝাঁকা নিয়ে গ্রামে বের হলো ফেরি করার জন্য। জনাব আলির মেয়ে রেশমি। দেখতে সুন্দরী। বেদের ঘরে এমন মেয়ে দেখা যায় না। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সবই যেন বিধাতার নিপুণ হাতে বানানো। কাচা হলুদের মত গায়ের রঙ, মাথায় লম্বা কাল কুচকুচে গোসলে (চুল), বাড়ন্ত গড়ন, হরিণের মত গোঙকুরি (চোখ), সদা ধবধবে সুন্দর খোঁজ কুই (দাঁত), থুতনির বাম পাশে কাল তিল, অর্ধ প্রস্ফুটিত গোলাপ। যৌবনের পথে পা দিয়েছে কিন্তু এখনও গন্তব্যে পৌছাতে পারেনি, এগিয়ে যাচ্ছে। রেশমি অন্য নেমারিদের (মেয়ে) মত নামড়াদের (ছেলে) দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সাজগোজ করে না। ওকে সাজতে হয় না। সুফি সবসময়ই বলে ঈশ আমাগো যে আল্লায় কি দিয়া বানাইছে! তর মত একটুখানি পাইলেই আমাগো আর কিছু লাগত না। রেশমির চোখে কাজল কিংবা কপালে টিপ কিংবা খোপায় ফুল গুজতে কেও কখনও দেখেনি তবুও রেশমি যেখান দিয়ে যায় পথের কেও এক নজর না তাকিয়ে পারে না। পথে যেতে যেতে চোখ যেন এমনি এমনিই আটকে যায়। সেদিন দলের আগে আগে রেশমি আর বাকিরা সবাই ওর পিছনে। অন্য সব বেদেনীর মত গোড়ালির উপরে তোলা লাল পাড় হলুদ শারী, লাল ব্লাউজ, গলায় পুতির মালা, হাত ভরা প্লাস্টিকের লাল চুরি, কোমরে আঁচল জড়ান মাথায় চুরির ঝাঁকা গলায় গানের সুর ‘মোরা এক ঘাটেতে রান্ধি বাড়ি আরেক ঘাটে খাই মোদের ঘরবাড়ি নাই’ আরও গাইছে ‘আমরা হেলায় নাগেরে খেলাই নাগেরই মাথায় নাচি’ সবাই ওর সাথে সাথে গলা মেলাচ্ছে।
অনেকেই অনেক কিছু বিক্রি করলেও জনাব আলির পরিবার মেয়েদের এই সব সাজ প্রসাধনী জিনিষ পত্র ছাড়া আর কিছু বিক্রি করে না। তবে দলের মধ্যে পারুল, সুফি, হিরা এবং অনেকের কাছেই তাবিজ কবচ, গাছ গাছড়ার তৈরি ঔষধ এবং ঝুরির মধ্যে সাপ নিয়েই প্রথম দিন নদীর ওপাড়ে গোপীনাথপুর গ্রামে গেল। সারাদিন ঘুরে ঘুরে ভালই বেচা কেনা হয়েছে। সন্ধ্যার আগে আগে আবার দল বেধে সবাই ঘাটে ফিরে এসেছে। পা ধুয়ে নৌকায় উঠে মাথার ঝাঁকা নামিয়ে বাবার প্রিয় মেয়ে আগে বাবার সাথে দেখা না করে কিছুই করবে না। বাবার সাথে দেখা হলো। আজকের এই নতুন এলাকা কেমন এই সব নিয়ে কথা হলো। এবার রেশমি আগা নায়ে এসে মুখ হাত ধুয়ে আগামী কালের জন্য কিছু মালামাল ঝাঁকায় ভরে মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করল মা কিছু রানছ?
রানছি
কি রানছ?
তর বাপে ইচা মাছ আর পুই শাক আনছিল তাই আর ডাইল রানছি
দেও মা খিধা লাগছে। এহ! সারাদিন যা ঘুরছি পাও এক্কেবারে টনটন করতেছে।

৩।
বেদেদের  সমাজ ব্যবস্থা দেশের আর দশটা সমাজের মত নয়, এদের সমাজে ভিন্ন নিয়ম শৃঙ্খলা। এদের না আছে কোন ঠিকানা না আছে বাড়ি ঘর। নৌকায়ই এদের জন্ম, নৌকায়ই এদের জীবন, সুখ-দুঃখ, সংসার, উৎসব আনন্দ বেদনা আবার নৌকায়ই মৃত্যু। ঝর তুফান, শীত গ্রীষ্ম, বর্ষা সারা বছর নৌকায় ভেসে এক ঘাটে এসে লগি গারে। কোথাও আবার দল বেধে বাজার ঘাট বা স্কুল কলেজের পাশে পতিত জমি  বা খাস জমিতে পলিথিন, বাঁশের চালি বা সস্তা হোগলা পাতা খেজুর পাতা দিয়ে ছৈয়ের মত বানিয়ে তার নিচেই বসবাস করে তবে এটাও অস্থায়ী। যাযাবর এই দল কোন এক জায়গায় স্থায়ী হতে পারে না। রক্তেই এদের যাযাবরের নেশা। কারা এদের পূর্ব পুরুষ সে ইতিহাস এরা জানে না। দাদা দাদি বা বংশ পরস্পরায় যা শুনে এসেছে এর বেশি আর যেতে পারে না। মাস খানিক এক জায়গায় থেকে অস্থির হয়ে যায়, নৌকার বহর নিয়ে বা ছৈ গুটিয়ে ছুটে চলে ভিন্ন কোন ঘাটের উদ্দেশ্যে। সর্দারই এদের নেতা। পরের গন্তব্য কোথায় হবে, কে মারামারি বা ঝগড়া ঝাটি করল, কার বিয়ে হবে, কাদের ছাড়াছাড়ি হবে এসব সালিস বিচার সর্দারই করে। স্থায়ী কোন নিবাস না থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দীক্ষা এদের নেই তবে শিশুকাল থেকেই বেঁচে থাকার জন্যে এদের পেশাগত নানান শিক্ষা দেয়া হয়। লতা (সাপ) ধরা, সাপের খেলা দেখান, সাপে কাটা রুগীর চিকিৎসা করে বিষ নামান,  পোক্কর (পাখি) শিকার করা ছেলেদের শেখান হয় আবার তেমনি করে মেয়েদেরও নানা ভাবে সেজে গুজে হাটে বাজারে পসরা সাজিয়ে বিক্রি করা বা গাওয়ালে (গ্রামে) যেয়ে ফেরি করা শিক্ষা দেয়া হয়। ছেলে মেয়ে ১০/ ১২ বছর বয়স হলেই মাথায় ঝাঁকা দিয়ে বা যে যেভাবে পারে তাকে সে ভাবে নিজে রোজগারের পথে নামিয়ে দেয়। ছোট ছেলেরা বনে জঙ্গলে ঘুরে রান্নার কাঠ খড়ি কুড়ায় আবার সুযোগ পেলে পাখি টাখি শিকার করে, মাছ ধরে। মেয়েরা সাধারণত মাথায় ঝাঁকা নিয়ে  গ্রামে বা মহল্লায় ঘুরে ঘুরে ফেরি করে আবার কখনও হাটে বাজারে পসরা সাজিয়ে বসে। পুরুষেরা নৌকা নিয়েই গ্রামে গ্রামে ঘুরে ফেরি করে সাথে বয়স্ক মহিলা যারা ঘুরে ফেরি করতে পারে না তারা নৌকায় থাকে। কখনও পুরুষেরা বনে জঙ্গলে ঘুরে সাপ ধরে, নৌকায় বসে বসে বড়শি দিয়ে মাছ ধরে। বেদেনীরাও সাপ ধরতে পারে। ঢোঁরা, লাউডগা, কালনাগিনী এমন সব বিষাক্ত সাপ। তবে সবাই সাপ ধরতে পারে না। হিংস্র মেজাজের এবং ভয়ঙ্কর বিষাক্ত দাঁড়াশ, শঙ্খিনী, গোখরো,  কাল কেউটে জাতের সাপ নিজেরা ধরতে না পারলে অন্য বেদের কাছ থেকে কিনে নেয়। কালনাগিনী বেদেনীদের ভীষণ পছন্দের সাপ, তাই হয়ত বেদেনীদের হাঁটা চলাফেরা বা স্বভাব অনেকটা সাপের মত। লক্ষ করলে দেখা যাবে  হাঁটার সময় এদের পা ফেলার ভঙ্গিও ভিন্ন রকম, এরা এক পায়ের পর আরেক পা ফেলতে সোজা করে ফেলে। সাপ খেলা দেখানোর সময় হিংস্র বিষাক্ত সাপকে বেদেনী বাহুতে কিংবা গলায় পেঁচিয়ে বাঁশী বাজিয়ে সুরেলা গলায় এই চির চেনা গান গেয়ে পথচারী বা দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে
‘খা খা রে খা, বক্ষিলারে খা,
কিপটারে খা, কঞ্জুসরে খা।
গাঁইটে টাকা বাইন্দা যে
না দেয় বেদেনীরে,
মা মনসার চেড়ি তাদের
খা খা করে খা।
খা খা খা ওই বক্ষিলেরে, কিপ্পিনেরে খা
গাঁইটে পয়সা বাইন্দা যে
না দেয় বেদেনীরে
তার চক্ষু উপড়াইয়া খা’।
এমন অনেক গান প্রচলিত আছে যা বিশেষ করে বেদেদের মুখে মুখে বেঁচে আছে। সমাজ এদের অবহেলা করে স্বীকৃতি না দিলেও এদের নিয়ে অনেক মনে দোলা দেয়া কাহিনী রচনা করেছে। অনেক সিনেমা তৈরি করেছে যেমন মহুয়া, বেদের মেয়ে, মনসামঙ্গল, সাপুড়ে, বেহুলা লখিন্দর, নাগিনী কন্যার কাহিনী, নাগিনী, সর্প রানী, সাপুড়ে মেয়ে, নাচে নাগিনী, বেদের মেয়ে, রাজার মেয়ে বেদেনী, বেদের মেয়ে জোসনা।

এদের স্বামী স্ত্রীতে ঝগড়া হলে কেউ কারো গায়ে হাত দেয়ার সুযোগ পায় না, নিয়ম নেই। নৌকার সামনের গলুইতে একজন আর পিছনের গলুইতে একজন বসে উত্তেজিত হয়ে গালাগালি করে, লগি বৈঠা এ ওর দিকে ছুড়ে দেয়। হুলুও (বিয়ে)এদের নিজেদের মধ্যেই হয়। ছেলে বা মেয়ের বয়স হবার সাথে সাথেই কোন অনাকাংখিত ঘটনা ঘটার আগে বিয়ে দিয়ে দেয়। মেয়েদের ১৪/১৫ বছর বয়স হলেই বিয়ে দেয়া হয়। স্ত্রী গাওয়ালে গেলে স্বামী রান্না বান্না সহ নৌকার গোছগাছ করে রাখে আবার সন্তানের দেখাশোনাও করে। নারী শাসিত এই সমাজে নারীরাই পেশায় মুল ভূমিকা পালন করে। পুরুষেরা সাধারণত অলস হয়, তবুও স্বামীকে বশে রাখার জন্য স্ত্রীরা নানা রকম তাবিজ কবচ তন্ত্র মন্ত্র করে যাতে পুরুষ ভিন্ন নারীতে আসক্ত না হয়। বেদেনীরা স্বামীদের আঁচলে বেঁধে রাখতে তুলনাহীন। পুরুষ বশে রাখতে তারা শরীরে সাপের চর্বি দিয়ে তৈরি তেল ব্যবহার করে, স্বামীর শরীরে এই তেল নিয়মিত মালিশ করে। কোনও পুরুষের পক্ষে বেদেনীর এই কৌশল উপেক্ষা করা সম্ভব হয় না। বেদেনীর মায়াজালে পড়লে কোন পুরুষ বেদেনীকে ছেড়ে যেতে পারে না। স্বামী বেদে স্ত্রীদের কাছে দেবতার মত, যাবতীয় ঝুট ঝামেলা বিপদ আপদ থেকে তাকে আগলে রাখার জন্য স্ত্রী আপ্রাণ চেষ্টা তদবির করে।
[ রেশমির সাথে কার পরিচয় হয়েছে জানতে ইচ্ছে করে? একটু অপেক্ষা করলে হয়ত জানা যাবে!]

3 comments:

  1. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  2. ছাপার অক্ষরে বই পাবার প্রবল অপেক্ষায় আছি প্রিয় বন্ধু।
    অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা আপনার জন্য।

    ReplyDelete
  3. ধন্যবাদ প্রিয় জামান ভাই। সুখে থাকুন ভাল থাকুন।

    ReplyDelete

Back to Top