কাল পরীর সমাধি [৭]-পর্ব-৪

 [পূর্ব সূত্রঃ  কেমন জমির প্রয়োজন সে কি আর আমি জানি আমাদের এই অঞ্চলে বুন্নার চাষ কখনও দেখিনি কাজেই তুমি এক কাজ কর বুজিবাকে নেমন্তন্ন কর, সে এসে আমাদের জমিগুলা দেখে বলে দিবে কোন জমিতে এর

চাষ করবে
বাহ! বেশ ভাল কথা বলেছ
বাবা, তুমি যদি বল তাহলে আমি আবার গিয়ে বুজিবাকে নেমন্তন্ন করে আসতে পারি
তুই যাবি?
তুমি বললে যেতে পারি
আচ্ছা, ভেবে দেখি।]
৬।
সকালে চিমা বুজিবার পাশের বাড়িতে তার বন্ধু ওর মতই অকর্মা ইনুর সাথে আড্ডা দেয়ার জন্যে যখন আসছিল তখন আবেলকে মালাইকাদের বাড়ি থেকে বের হতে দেখে সে তার মত পরিবর্তন করে ইনুর বাড়িতে না গিয়ে মালাইকাদের বাড়িতে এলো। এসে দেখে মালাইকা বাড়ি থেকে বের হবার পথে বিশাল বাবলা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে এই মাত্র অচেনা যে লোকটা গাধা নিয়ে চলে যাচ্ছে তার পথের দিকে চেয়ে আছে।
কিরে মালাইকা এখানে দাঁড়িয়ে কার পথের দিকে তাকিয়ে আছিস? ও তোর কে হয়? আগে তো কখনও দেখিনি!
মালাইকা চিমাকে আসতে দেখেছে কিন্তু ও যে ওদের বাড়িতেই আসছে বুঝতে পারেনি। ওকে ওর সামনে দাড়াতে দেখে একটু ঘাবড়ে গেল। পিছন ঘুরে বাড়ির ভিতরে যেতে উদ্যত হল কিন্তু চিমার কথায় থেমে গেল।
যেই হোক তাতে তোর কি? তুই কেন এসেছিস?
ও! তাহলে এই ব্যাপার! দাড়া দেখাচ্ছি আমি কেন এসেছি!
তুই আবার কি দেখাবি, তোর কি মুরোদ আছে যে দেখাবি? সারা দিন পরে থাকিস শুধু কালা কাটির কলসি নিয়ে, আর কি পারিস তুই?
মালাইকা মনে মনে একটু ভয় পেল। যদিও ভয় পাবার মেয়ে অন্তত মালাইকা নয়। তবুও শুধু শুধু ঝামেলায় জড়াবার কি দরকার? চিমা মোড়লের ছেলে হলে হবে কি! একেবারে অকর্মার হাড্ডি। গায়ে গতরে একটা বিড়ালের শক্তিও নেই। মালাইকা ভাবতেও পারেনি চিমা কি করতে এখানে এসেছে।
বুজিবা বাড়ি আছ?
বাবাকে কেন ডাকছিস?
দেখবি বুজিবা আসুক তখনই শুনবি কেন ডাকছি
ভিতর থেকে বুজিবা বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল
কে?
এইতো, আমি চিমা
কি ব্যাপার চিমা! তুমি এখানে এই সময়ে?
কেন, আমার কি এখানে আসতে নেই নাকি?
না তা বলছি না তবে তুমি তো কখনও আস না তাই বলছিলাম
এখনও তেমন কোন দরকার হয়নি তাই আসা হয় না এবারে দরকার হলো তাই এলাম, তুমি কি চলে যেতে বলছ?
না, তা বলছি না। বল কি ব্যাপার
বলব। কথাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই চল ওই ওখানে একটু বসে বলি
চল
দুই ঘরের মাঝে গাছের ডাল দিয়ে বানান একটা বেঞ্চে দুই জনে বসল।
বল
আসলে আমি মালাইকাকে বিয়ে করতে চাই এবং এই কথা বলতেই আজ এখানে এসেছি। ওকে আমার খুব পছন্দ
কিন্তু আমার মনে হয় ও তোমাকে চায় না কাজেই তোমার এই এক তরফা চাওয়ার কি কোন মূল্য আছে? তাছাড়া তোমার ক্ষমতা সম্পর্কে এ গ্রামের সবাই জানে
দেখ বুজিবা আমি এত কথায় কান দিতে পারি না। আমার ওই এক কথা, আমি মালাইকাকে চাই
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি তোমার বাবাকে বল, সে যদি আসে তাহলে ভেবে দেখব
এতে আবার ভাবার কি আছে? বাবা কি আলাদা কিছু বলবে, আমি যা চাইব বাবা তাই বলবে
বেশ তুমি তাকে বলেই দেখ
আচ্ছা আমি তাকে নিয়েই আবার আসব।

৭।
সেদিন চিমা চলে যাবার কয়েকদিন পর সকাল বেলা চিমা আর চিমার বাবা ফোলামি এসে হাজির।
ফোলামিকে দেখেই বুজিবা চমকে উঠল। তাহলে চিমা ঠিকই তার বাবাকে নিয়ে এসেছে! কিন্তু বুঝতে পারছি না ফোলামি কেমন করে আমার মেয়ের সাথে ওর এই অকর্মা ছেলের প্রস্তাব নিয়ে আসল? মনের কথা মনেই চেপে রেখে জিজ্ঞেস করল
কি ব্যাপার লিয়ের তুমি কেন এসেছ?
আসলাম একটা প্রস্তাব নিয়ে, চল আগে একটু বসি তারপরে বলি। আর শোন একটু তামাক জ্বালাবার ব্যবস্থা কর।
চল বসি, তামাকের ব্যবস্থাও করছি।
লিয়েরকে দেখে বুজিবার স্ত্রী উঠানের পাশে ঘরের পিছনের বিশাল তেঁতুল গাছের ছায়ার নিচে পিড়ি পেতে বসার ব্যবস্থা করে দিল। বসতে বলে তামাকে আগুনের আয়োজন করতে গেল। ওদিকে মালাইকা পাশের ঘরে গিয়ে এদিকে কান পেতে বসে রইল।
শোন বুজিবা আমি এসেছি তোমার মেয়ের সাথে চিমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে
শুনেই বুজিবা চমকে উঠল। স্বয়ং মোড়ল এসেছে। একে কিছুতেই বিগড়ানো যাবে না। তাহলে এই গ্রামে বসবাস করা কঠিন হয়ে যাবে। হয়ত আবার একটা দাঙ্গা হাঙ্গামাও হতে পারে। খুব কৌশলে কাজ করতে হবে।  কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে ভেবে বলল
কিন্তু তোমার এই ছেলের কি এমন যোগ্যতা আছে যে তুমি এই প্রস্তাব নিয়ে এসেছ? আমি যা দেখেছি ওকে শুধু কাটি কালা আর তেলার কলস নিয়েই বসে থাকে সারাক্ষণ, আর কিছু তো করতে দেখি না। তাহলে বল কি করে এই প্রস্তাব মেনে নিতে পারি?
বুজিবা তুমি একটু ভেবে কথা বল। দেখ, আমি নিজে এসেছি তোমার এখানে
বুঝলাম, সবই ঠিক আছে কিন্তু তোমার ছেলে একা আমার মেয়েকে পছন্দ করলেইতো হয় না ওকেও তো ওর ভাল লাগতে হবে
হ্যাঁ তা হতে হবে বৈকি, তুমি এক কাজ কর ওকে একটু এখানে আসতে বল আমি জিজ্ঞেস করে দেখি
এ কথা শুনেই ঘর থেকে মালাইকা বের হয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল
লিয়ের, আপনার সম্মান রক্ষা করেই বলছি, আপনি আপনার ছেলের শুধু একটা যোগ্যতার কথা আমাকে বলুন
আমি জানি ওর এমন কোন যোগ্যতা নেই তবে ও কিন্তু খুব ভাল ছেলে
খুব ভাল ছেলে দিয়ে আমি কি করব? বৌকে খাওয়াবে কি? এই রকম অকর্মা মুরদ ছাড়া ছেলে আমার পছন্দ না।
দেখ, ও কিন্তু এই গ্রামের লিয়েরের ছেলে!
হুম, ছেলেতো লিয়েরের কিন্তু হয়েছেতো একটা বিড়াল। ওর গলায় কয়টা সিংহের দাঁত বা নিদেন পক্ষে কুমিরের দাঁত আছে দেখাতে বলুন। এইযে দেখুন আমার গলার মালা, এটা গতবার আপনিই দিয়েছিলেন
একটু থেমে আবার বলল
ওকে বলুন ও যদি আমার সাথে লড়াই করে জিততে পারে তাহলে আমি ওকেই বিয়ে করব
লিয়ের নল দিয়ে তামাক টানছিল। মালাইকার এই কথা শুনে হঠাৎ করেই ক্ষিপ্ত হয়ে বলল
তাহলে তুমি সরাসরি না বলছ?
না কোথায় বললাম, এইতো আমি এখানেই দাঁড়িয়ে আছি ওর যোগ্যতা দিয়ে ওর গায়ের শক্তি দিয়ে আমাকে তুলে নিয়ে যাক! বলুন ওকে!

মেয়েকে যোগ্য শিক্ষাই দিয়েছ বুজিবা! ঠিক আছে আমি উঠলাম কিন্তু এ জন্যে তোমাদের অনেক মূল্য দিতে হবে মনে রেখ। চল চিমা এই মেয়েকে তোর বিয়ে করতে হবে না আমি তোর জন্যে এর চেয়ে ঢের ভাল মেয়ে খুঁজে দিব।
তাই করুন গিয়ে। আর একটা কথা শুনে যান, আমি আরযো গ্রামের লিয়ের ওবির ছেলে আবেলের বাগদত্তা, সামনের পূর্ণিমায় ওরা প্রস্তাব নিয়ে আসবে
কথাটা শুনে বুজিবা একটু অবাক দৃষ্টিতে মেয়ের মুখের দিকে তাকাল। এ কি বলছে মেয়ে! কই, আমাকে কিছু বলেনি কেন? কথাটা শুনেই ফোলামি ভীষণ ভাবে উত্তেজিত হয়ে বলল
এটা হতে পারে না, তুমি এই গায়ের মেয়ে। এই গায়ের ছেলের সাথেই তোমার বিয়ে হবে
বলেই সিংহের মত গর্জাতে গর্জাতে উঠে চলে গেল।
ওরা চলে যাবার পর মালাইকার মা এসে ব্যস্ত হয়ে বুজিবাকে বলল
এখন কি হবে? আমার মন বলছে একটা দাঙ্গা হাঙ্গামা হবে
হবেইতো, ফোলামি কি এমনিই ছেড়ে দিবে?
মালাইকার দিকে ঘুরে বলল
তুই আবেলের কথা আমাকে আগে বলিসনি কেন?
ভাবছিলাম ওরা প্রস্তাব নিয়ে এলেই জানতে পারবে তাই কিছু বলিনি আবার এর মধ্যেই যে ওরা আসবে তা কি আমি জানতাম?
আমি আগে জানলে ফোলামিকে সেই ভাবে বলতাম
কালিশা বলল
যা হবার হয়েছে এখন কি করবে, লিয়ের যেভাবে রেগে চলে গেল কি জানি কি করে?
উপায় একটা বের করতে হবে। গ্রামের সবার সাথে আলাপ করে দেখি কে কি বলে। আরে, ওর পক্ষে এখন আর আগের মত কেউ নেই। শক্তিও কমে গেছে লক্ষ করেছ? এখন বাঘ সিংহ কেন একটা ভেড়াও মারতে পারবে না। তবে হাঙ্গামা অবশ্যই একটা হবে এবং আমাদের এ জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে।
ওরা একসাথে অনেকক্ষণ বসে রইল। বুজিবার হাতে তামাকের নল। চিন্তিত।
একটু পরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল দাও দেখি কিছু খেতে দাও। খেয়ে একটু বের হই।
[আটানগা গ্রামের কি পরিস্থিতি চলছে এখন? আবেল কি পারবে তার প্রিয়তমাকে রক্ষা করতে]

No comments:

Post a Comment

Back to Top