নক্ষত্রের গোধূলি-[১২৫]-৯৩

১৮৫।
একটা ট্যাক্সি ডেকে মহিলাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে এসে তার নিজের রুমে বসতে দিলেনএক গ্লাস  পানি খেতে দিয়ে বাথরুম দেখিয়ে বললেন আমি এখন নিচে ডিউটিতে যাব আমি যাবার পর আপনি ফ্রেশ হয়ে কাপর বদলে রেস্ট করুন
আমি আপনার খাবার ব্যবস্থা করি। রাশেদ সাহেব কাপর চেঞ্জ করে ডিউটির পোষাক পরে নিচে চলে গেলেনএকটু পরে এসে দেখে মহিলা এর মধ্যে বাচ্চাটাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে যেমন ছিল তেমনি বসে কাঁদছে।
-কি হলো, আপনি কাপর বদলে নিন কবে থেকে এক কাপরে আছেন! মুখ হাত ধুয়ে মাথাটা আঁচড়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নিন। কেঁদে কেটে চিন্তা করে কিছু হবে না আপনার ভাগ্য ভাল আমাদের হাতে পৌঁছেছেন উপায় একটা হবে। কিন্তু একটু সময় লাগতে পারে।
মহিলা নিতান্ত দায়ে পড়ে ট্রলিটা খুলে কাপর, তোয়ালে চিরুনি বের করে বাথ রুমে গেল। যান আমি আপনার বাচ্চার কাছে আছি। একটু পরে ফিরে এলে বললেনআমি বাইরে আছি আপনি কাপর বদলে নিন। তারপরে খাওয়া দাওয়া করে পরে সব শুনব আমারও খিধে লেগেছে আমিও খাব। রাশেদ সাহেব আবার নিচে যেয়ে একটা টেবিলে দুইজনের খাবার রেডি করে উপরে এসে দেখে মহিলা কাপড় বদলে বসে আবার কাঁদছে।
-আহা এত কাঁদবেন না, কেঁদে কোন লাভ নেই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুণ, আপনি আর এখন রাস্তায় নেই অন্তত একটা আস্তানা পেয়েছেন। চলেন
বলে মেয়েটাকে কোলে তুলে রুম থেকে বের হলেনমহিলা তার পিছনে নিচে এসে রাশেদ সাহেবের দেখান টেবিলে বসল। খাবার প্লেট নিয়ে শুধু নাড়াচাড়া করছে দেখে রাশেদ সাহেব তাড়া দিলেন-
-আপনি না বললেন মেয়ে বুকের দুধ খায় তাহলে আপনি খাচ্ছেন না কেন? আপনি না খেলে ও কি খাবে?
অনিশ্চয়তা, আতংক, ভয়, অচেনা পরিবেশে এই অচেনা খাবার কোন ভাবে খেতে শুরু করল। খাবার সময় যা কথা হলো। মহিলার নাম মর্জিনা, বাড়ি ফরিদপুর তবে ঢাকায় থাকে, অবস্থাপন্ন ঘরের মেয়ে। স্বামীর বাড়ি বরিশাল কিন্তু অনেকদিন যাবত এখানে থাকে। দুই বছর আগে দেশে বিয়ে হয়েছে। তারপরে কাগুজে প্রক্রিয়া সেরে এখানে আসতে আসতে এত দিন লেগে গেছে। এর মধ্যে এই মেয়ে জন্মেছে।
-, তার মানে আপনি আপনার স্বামীকে বেশিদিন দেখেননি!
-হ্যাঁ বিয়ের পর মাত্র ৩/৪ মাস ছিল
-যা দেখেছেন তাতে কেমন মনে হয়েছে?
-মনে তো ভালই হয়েছে কিন্তু আমি এখন কিছুই বুঝতে পারছি না, কি বলব!
অল্প একটু খেয়ে উঠে পরল।
-আপনি আমার ভাই। এ পর্যন্ত যা করলেন তা না হলে আমি এই শীতের মধ্যে মেয়েকে নিয়ে এখন কোথায় যেতাম কি করতাম? বলেই আবার কান্না
-আরে এত কাঁদছেন কেন বলছি তো একটা উপায় হবে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। এই রেস্টুরেন্টের মালিকেরা আসুক তাদের সাথে আলাপ করি দেখি কি করা যায়। এদেশে কেও হাড়িয়ে যায় না। ও ভাল কথা, আপনার বাড়িতে নিশ্চয় চিন্তা করছে। একটা খবর দিবেন?
-কি খবর দিব? এসব শুনে আরও বেশি চিন্তা করবে
-না না তা হবে কেন? আপনি নম্বর বলেন যা বলার আমি বলছি
বলেই পকেট থেকে মোবাইল বের করলেন
মর্জিনা নম্বর বললো
-হ্যালো, এটা কি মর্জিনাদের বাড়ি?
-হ্যাঁ, আপনি কে বলছেন?
-আমি লন্ডন থেকে বলছি এই নেন মর্জিনার সাথে কথা বলেন বলে ফোনটা মর্জিনার হাতে দিল
ফোনটা কানে পেতে মর্জিনার বাধ ভাঙ্গা কান্না। কোন কথাই বলতে পারছে না। কিছুতেই কান্না থামাতে পারছে না। নাকের পানি চোখের পানি একাকার। রাশেদ সাহেব ওর হাত থেকে ফোন নিয়ে জিজ্ঞেস করল,-কে ফোন ধরেছে?
-বাবা
-হ্যালো, আপনারা কোন চিন্তা করবেন না। মর্জিনা ভাল ভাবেই পৌঁছেছে
বলে সংক্ষেপে ঘটনা জানাল। শুনে ওর বাবাও কান্না শুরু করল।
-আপনারা চিন্তা করবেন না, আমাদের এখানে এসে যখন পৌঁছেছে তখন যে ভাবেই হোক আমরা নাদিরকে খুঁজে বের করবই আর তাকে না পাওয়া পর্যন্ত মর্জিনার কোন অসুবিধা হবে না ও এখানেই আমাদের কাছে থাকবে। আমাদের মালিকেরা খুব ভাল মানুষ তারা কোন বাঙালি এমন বিপদে পড়লে যথেষ্ট সাহায্য করে।
-দেখবেন বাবা, আপনারা না দেখলে যে আমাদের এখান থেকে কিছু করার নেই।
-হ্যাঁ আপনারা চিন্তা না করে শুধু দোয়া করবেন।
ফোন রেখে দেখে সমসু ভাই, আসিয়াদ ভাই এসে ওদের টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে কথা শুনছে। রাশেদ সাহেব একে একে সব জানালেন 
-কি নাম বললেন নাদিরুজ্জামান?
-হ্যাঁ এইতো ঠিকানা।
আসিয়াদ ভাই ঠিকানা লেখা কাগজটা হাতে নিয়ে দেখে বললো -এই নামে কাওকে চিনি না। কে এই লোক? হয়ত এখানে নতুন এসেছে, আচ্ছা আপনার স্বামী কি করে জানেন?
-বিয়ের সময় শুনেছি কোন ইলেকট্রনিক কোম্পানিতে কাজ করত
-কোম্পানির নাম জানেন?
-সনি না কি যেন মনে পড়ছে না
-ও তাহলে আমাদের চেনার কথা না, বললাম না নতুন এসেছে। হয়ত আগে অন্য কোথাও ছিল এখন এখানে এসেছে। আচ্ছা বিয়ের সময় কোথায় ছিল জানেন?
-তখন বলেছিল লন্ডন থাকে
-আপনাদের বিয়ে হয়েছে কি ভাবে?
-আমাদের পাশের বাড়িতে ওর আত্মীয়ের বাড়ি, তারাই যোগাযোগ করেছিল
-আচ্ছা তাহলে পালিয়ে যেতে পারবে না, হয়ত কোন সমস্যায় পড়েছে, কিন্তু এখন কিছু না জেনে পুলিশেও জানাতে পারছি না।  আচ্ছা আপনি এখানেই থাকেন। রাশেদ সাহেবকে দেখিয়ে বললো,-দাদা আছে সেই আপনার দেখা শুনা করবে, আপনার যখন যা লাগে দাদাকে বলবেন। নিজের মত করেই থাকবেন ভয় বা চিন্তার কিছু নেই। আমরা আছি। দেখছি আশেপাশে সবার কাছে খোজ নিয়ে দেখি কেও চিনতে পারে কি না। কাছেই, আবারক্যানফিগে সনির একটা ফ্যাক্টরি আছে ওখানেও খবর নিয়ে দেখতে হবে।
-দাদা এক কাজ করেন
-কি কাজ?
-আপনার পাশের রুমে যেখানে আনিস থাকে ওকে উপরে যেতে বলে দেই আপনি এনাকে ওই রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দেন
-হ্যাঁ তাই ভাল হবে। আপাতত থাকুক পরে ডিউটি শেষ করে সব ম্যানেজ করে নিব।
মর্জিনার দিকে ঘুরে বললো -দেখলে, তোমার কোন অসুবিধা হবে না চল উপরে চল আপাতত আমার ওখানেই রেস্ট নাও রাতে এসে দেখব তোমার ব্যবস্থা। রাশেদ সাহেব কোন ফাঁকে তুমি করে বলতে শুরু করেছেনএকটু থেমে আবার বললেন-তোমার কিছু লাগবে?
-না ভাই, আর কি লাগবে? আমার কিচ্ছু লাগবে না।
[চলবে]

No comments:

Post a Comment

Back to Top