নক্ষত্রের গোধূলি-[১২৫]-৮২

১৬০।
কথা বলতে বলতেই রাত প্রায় ভোর হয়ে এসেছিল বলে এর পরে শুয়ে পড়েছিল। পরদিন থেকে রাশেদ সাহেব আবার আগের মত হাসিখুশিনাসিরের সাথে মেয়ের আসার ব্যাপার, ভর্তি ফর্ম আনা, ভর্তি হওয়া এবং ভিসা পাওয়া সব কিছু
আলাপ হলো। নাসির বললো যাক এতদিনে আপনার একটা সহায় হলো। অন্তত মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারবেন। মাঝে মাঝে লন্ডন যেয়ে দুই চার দিন থেকে আসলে মনটাও একঘেয়েমি থেকে রেহাই পাবে আর অন্তত নিজেকে এতটা অসহায় মনে হবে না। এই যে এতদিন ভাবতেন কিছু হলে কোথায় যাব, কে দেখবে এখন আর সে চিন্তা থাকবে না।
আজ আবার নাসির আসার সংবাদ এবং তিথির ভিসার সংবাদ বাহাদুরকে জানাল। বাহাদুর অনেকক্ষণ কথা বললোকবাহাদুর আবারডিনে থাকতে পারেনি। বললো -রাশেদ ভাই আপনি যা বলেছেন এখানকার সবজায়গায়ই একই অবস্থা। এখানে আসার পর জানতে পারলাম এদের একজন পার্মানেন্ট স্টাফ ছয় সপ্তাহের ছুটিতে বাংলাদেশে গেছে তার জায়গায় আমাকে এনেছে। ভেবে দেখেন আমি ওখানে একটা ভাল কাজ ছেড়ে এখানে এই এত দূরে আসলাম আর এখন শুনি এই অবস্থা।
-তাহলে এখন কি করবেন?
-দেখছি, আমিও আপনার অভিজ্ঞতা আর আমার এই অবস্থা দেখে ভাবলাম স্কটল্যান্ডে আর না। এখানেও গোসলের গরম পানি নেই। ইলেকট্রিক জগে পানি গরম করে নিতে হয় আর চিন্তা করে দেখেন এই স্কটল্যান্ডের মত শীতেও রুমে সেন্ট্রাল হিটিং নেই। আলগা হিটার আছে তা আবার দুই ঘণ্টার জন্য চালু থাকে পরে অটো বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে থাকা যায়? আপনি যা বলেছেন হুবহু একই অবস্থা।
-হ্যাঁ আমি তাই দেখে এসেছি
-লন্ডনে খবর দিয়েছি দেখি অন্য কোথাও পেলে চলে আসব। চেলতেনহেমে একটা খবর পেয়েছি বেতনের কথা হয়নি। সেটল হলে এখানকার মেয়াদ শেষ হবার আগেই চলে যাব। এদের একটা ঝামেলায় ফেলে চলে যাব।
-আচ্ছা চেলতেনহেমতো আমাদের কাছেই, আসলে বলবেন। নাসির সহ একবার যেয়ে বেড়িয়ে আসব
-বলব, অবশ্যই আসবেন যদি এখানে হয়

১৬১।
দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন কেটে গেল। দুপুরে ডিউটি সেরে নাসিরের সাথে বাইরে দূরের ওই রাগবি ক্লাবের মাঠে বা তার আশেপাশের জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করে কাছে রাস্তার ওপাড়ে টেসকো থেকে টুকিটাকি কেনাকাটা করে সময়গুলি বেশ চলে যাচ্ছিল। এমনি এক দিন সকালে মোবাইলে তানিমের কল এলো।
-হ্যালো তানিম কেমন আছ?
-ভাইয়া আমরা ভাল আছি, আজ তিথির জন্য  থাকার জায়গারএকটা সংবাদ পেয়েছি।
-কোথায়?
-স্টেপনি গ্রিনে ময়মনসিংহের এক ফ্যামিলির সাথে, ওদের দোতালায় একটা ঘর ফাঁকা হবে এই মাসে, আমি বলেছি আমার ভাতিজী আসছে ওর জন্য আমার এই রুমটা দরকার।
-ভাড়া কত?
-সপ্তাহে পঞ্চাশ পাউন্ড
-তাহলেতো ভালই হয়, তুমি ওদের পাকা কথা বলে দাও আর এদিকে আমি ওকে ফ্লাইট কনফার্ম করতে বলি
-হ্যাঁ, তাই করেন ভাইয়া। তাহলে এখন রাখি আমাকে আবার কাজে যেতে হবে।
-আচ্ছা তানিম রাখি।

ফোনটা কেটে দিয়ে সকালে কাজকর্ম সেরে নাসিরকে নিয়ে নাশতা খেয়ে ঢাকার বাড়িতে কল করলেন
ওপাশে মনির কণ্ঠে হ্যালো ভেসে এলো
-কেমন আছ তোমরা?
-আমরা ভাল আছি, তুমি কেমন আছ?
-একই রকম চলে যাচ্ছে। তিথির জন্য লন্ডনে একটা থাকার জায়গার সন্ধান পেয়েছি এইমাত্র, তিথি কোথায়?
-এইতো, তাহলে তুমি মেয়েকে নিয়েই যাবে স্থির করেছ?
-কেন তুমি আসতে দিতে চাইছ না?
কি হবে গিয়ে, এদেশে কি কেও পড়ালেখা করছে না?
-করছে
-তাহলে?
-তাহলে আবার কি! লন্ডনে পড়া আর ঢাকায় পড়ার মধ্যে একটু কি পার্থক্য নেই?
-তা থাকবেনা কেন আমি তেমন কথা বলছি না
-তাহলে কি বলছ? এত কষ্ট করে ভিসা নেয়া হলো তাতে কত খরচ হলো তুমি এখন কি বলছ?
-আচ্ছা ঠিক আছে তুমি নিতে চাইছ নিয়ে যাও, মাঝুও সেদিন এই নিয়ে আলাপ করছিল
-শোন মনি তুমি এ নিয়ে কি মন খারাপ করছ?
-না আমি মোটেই তা করছি না শুধু খরচের কথা ভাবছি, তুমি তো কোনদিন এসব নিয়ে কিছু ভাবলে না
-ভেবে আর কি হবে, দেখই না কি হয় ভাগ্যে যা আছে তাই হবে এসব নিয়ে তুমি কিছুই ভেবো না দাও ওকে একটু দও টিকেট করার কথা বলে দেই যেন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই চলে আসতে পারে।
[চলবে]

No comments:

Post a Comment

Back to Top