নক্ষত্রের গোধূলি-[১২৫]-৮৭

১৬৮।
ফিরোজ ওকে আগে ঢাকায় দেখেছে কিন্তু ওর স্ত্রী ওকে আগে দেখেনি। সালাম করল। একটু পরে ফিরোজ এলো।
-কী তিথি লন্ডন কেমন লাগছে?
-না চাচা এখনও বুঝতে পারছি না।
-বুঝবে কি ভাবে, ও তো কাল সন্ধ্যায় এসে পৌঁছেছে ততক্ষণ বাবা, চাচা চাচীর সাথে ছিল, তার পর যে ঘুম, তোমাদের এখানে আসার আগে ঘুম থেকে টেনে তুলে এনেছি।
ফিরোজের সাথে কথা বলার সময় ভাবী চা নাস্তা নিয়ে এসে রাতে খেয়ে যাবার জন্য খুব পীড়াপীড়ি করল।
বুঝিয়ে বললো, -ভাবী, এসেছে যখন এখন অনেক সময় পাবে, ছোট খাট ছুটি ছাটায় এখানে এসে ২/১ দিন থেকে যাবে তখন অনেক খাবার সময় পাবেএখানে আপনাদের কাছেই থাকবে, আমি থাকব কত দূরে, কখন কি হয় না হয় আপনারাই দেখবেন। তার চেয়ে এখন আমি যতটা পারি চিনিয়ে দিয়ে যাই। কাল কলেজে নিয়ে যাব। ওদিকে আবার কাল রাতে তানিমরা এসেছিল ওর বৌ বলে গেছে আজ রাতে ওদের ওখানে খেতে।
-ঠিক আছে তা হলে, তুমি যখন যে কোন অসুবিধায় পর সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে বলবে আমি বা তোমার চাচা গিয়ে নিয়ে আসব, কোন চিন্তা করবে নাবাবা মা কি আর সব সময় কাছে থাকতে পারে? তুমি এখন বড় হয়েছ, আর তা ছাড়া তোমার বাবা থাকে কত দূরে, সে তো আর সব সময় আসতে পারবে না। তোমার চাচাও কাছে থাকে না। তুমি আমার সাথে যোগাযোগ রেখ।
-আচ্ছা চাচী।
-ভাবী দুই সেট জামা কাপড় এনে রেখেছিল তা বের করে দিল।
-তা হলে ভাবী আজ উঠি।

এর পর সোজা তানিমের বাসায়। ওখানে যেয়ে দেখে ওর সাথে ঢাকায় প্রাইমারি স্কুলে পড়ত শিখা ওই বাসায়ই থাকে। শিখা এক সলিসিটরের অফিসে কাজ করে আর ওর স্বামী ম্যাকডোনালে কাজ করে। তানিম দেখে অবাক হলো তোমরা আগে থেকেই পরিচিত? তাহলেতো ভালই হলো। তানিমের বৌ অনেক কিছু রেঁধেছিল। খেয়ে দেয়ে কিছুক্ষণ গল্পসল্প করল। এখানেও তানিম, তানিমের বৌ, শিখা একই রকম উপদেশ পরামর্শ দিল। রাত ১১টা বেজে গেল বাসায় ফিরতে। কাল কি করবে সে প্ল্যান করে শুয়ে পরল।

১৬৯
সকালে বের হয়ে ডিসট্রিক্ট লাইনে মনুমেন্ট নেমে ট্রেন বদলে নর্দার্ন লাইন ধরে বারা স্টেশনে নেমে আর কলেজ খুঁজে পাচ্ছিল না। প্রায় ঘণ্টা খানিক খুঁজে তারপর পেল। ওহ সে কি হেস্তনেস্ত, কলেজের চার পাশ দিয়ে ঘুরছে কিন্তু কলেজ দেখতে পাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত পেল। ভর্তি করে কবে থেকে ক্লাস শুরু হবে, কবে এসে কোর্স মেটেরিয়াল নিতে হবে সব কিছু জেনে কিছু দরকারি কাগজ পত্র নিয়ে বেরিয়ে এলো।
আসার পথে জিজ্ঞেস করল -কেন পাইনি বুঝেছ?
-হ্যাঁ বুঝেছি, এইতো এই রেস্টুরেন্টের পাশ দিয়ে গেলেই হবে ওই তো ডান দিকে স্টেশন।
-ঠিক আছে, এই ভাবেই এসো, চল এখন তোমাকে বাঙ্গালি লন্ডনে নিয়ে যাই ওখানে গিয়ে খেতে হবে ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে।
-হ্যাঁ আব্বু আমারও ক্ষুধা লেগেছে, কিন্তু বাঙ্গালি লন্ডন মানে?
-মানে গেলেই বুঝবে, আমি আগে থেকে বলে তোমার অবাক হবার পথ বন্ধ করতে চাই না।
অল্ডগেট ইস্টে নেমে স্টেশন থেকে উপরে এসেই বাংলায় ব্রিক লেনরাস্তার নাম লেখা এবং অধিকাংশ উপমহাদেশীয় লোকজন দেখে খুকু বললো -আব্বু আমি এই বারো ঘণ্টা ফ্লাই করে এ কোথায় এলাম এ তো দেখছি একে বারে আমাদের ঢাকা!
-চল আরও সামনে চল আরও দেখ
যতই এগুচ্ছে অধিকাংশ দোকানের নাম, রাস্তার নাম সব বাংলায় লেখা দেখে খুকু অবাকযতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। কিছু দূরে বাংলাদেশের সোনালি ব্যাংক পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসে হোয়াইট চ্যাপেল এলো। এখানে রাস্তার পাশে ফুটপাথে তাঁবু টানানো শাক সবজী থেকে মোবাইল ফোন সহ নানা ধরনের জিনিসের দোকান দেখে তিথি আরও অবাক।
-লন্ডনেও এমন ফুটপাথে বাজার!
-নিজের চোখেই দেখছ আর জিজ্ঞেস কর কি।চল আব্বু আজ আমরা ইংলিশ লাঞ্চ করি।
-ইংলিশ লাঞ্চে কি থাকে?
-এদের ট্র্যাডিশনাল লাঞ্চ হচ্ছে ফিস এন্ড চিপস। বলে কাছে ছোট একটা দোকানে ঢুকল।
ওর বয়সী এক ওয়েট্রেস এসে জিজ্ঞেস করল কি খাবে
খুকু বললো -আব্বু দুই রকম অর্ডার দেই তাই দুইটাই টেস্ট করে দেখতে পারব!
-হ্যাঁ দাও।
একটা দিল ফিস এন্ড চিপস, সাথে মটর শুঁটি আর সালাদ, আর একটা চিকেন এবং বেকড বিনস সাথে টোস্ট আর সালাদঅর্ডার নিয়ে ওয়েট্রেস মেয়েটা চলে গেলে খুকু বললো
-আব্বু মেয়েটা যেমন সুন্দর তেমন ওর আচরণ তাই না?
-হ্যাঁ, আবার এলে জিজ্ঞেস করে দেখ হয় তো ও তোমার মত ছাত্রী।
সত্যিই মেয়েটা যখন দুই ট্রেতে করে দুই হাতে খাবার এনে টেবিলে নামিয়ে রাখছিল তখন খুকু জিজ্ঞেস করল
-তুমি কি এখানে ফুল টাইম কাজ কর?
-না আমি পার্ট টাইম।
-তা হলা অন্য সময়ে কি কর?
-আমি পড়াশুনা করি।
-কোথায়?
ওর কলেজের নাম শুনে খুকু বললো ,
-আমি এই মাত্র ওই কলেজে ভর্তি হয়ে এলাম।
-তাই নাকি? তাহলে তো তুমি আমার কলেজ মেট!
-হ্যাঁ তাই দেখছি।
-তোমার কথা শুনে মনে হয় না তুমি ইংলিশ, আমি কি ভুল বলছি?
-না তুমি ঠিক ধরেছ, আমি পোলিশ।
-বাহ!
দোকানে ওরাই দুই জন কাস্টমার ছিল, খেতে খেতে ওরা আরও কিছু আলাপ করল। রাশেদ সাহেব শুনছে আর খাচ্ছে আর দেখছে খুকু এখানে ভাষা নিয়ে কোন অসুবিধায় পড়বে কি না। দেখল মোটা মুটি চলছে, কালই বাংলাদেশ থেকে এসে কি আর রাতারাতি ইংরেজ হয়ে যেতে পারে? তবে যা বলছে তা মন্দ না। একটু নিশ্চিন্ত হলো।মেয়েটির নাম আলেকজান্দ্রা। আলেকজান্দ্রা আবার এক নতুন কাস্টমার এলে তাকে এটেন্ড করতে গেলে খুকু বলল-
-মেয়েটা খুব ভাল, তাই না আব্বু? ওকে কিছু টিপস দিয়ে দিও।
-আচ্ছা, সে তুমিই দিও বলে একটা ৫ পাউন্ডের নোট বের করে ওর হাতে দিল, তবে এখানে ৯৫% ভাগ রেস্টুরেন্টে টিপস মালিকেরা নিয়ে নেয়, কর্মচারীদের দেয় না। কাজেই যাবার সময় তুমি কাউন্টারে যে আছে তাকে দেখিয়ে ওকে ডেকে ওর হাতে নোটটা দিয়ে ওই লোককে বলবে এটা ওকে দিলাম।
খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল -কি আব্বু এই খাবার কেমন লাগছে?
-আমি তোমার মেয়ে না?
-এই তো বাবা বিদেশে না এলে জীবনের অনেক কিছু অজানা থেকে যায়, কি করে পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলতে হয় তা কিছুই বোঝা যায় না। এখন এসেছ, দেখবে পৃথিবীটা কেমন।
[চলবে]

No comments:

Post a Comment

Back to Top