নক্ষত্রের গোধূলি-[১২৫]-৫৬

১০৫।
যার যা খুশি পান করছে, মাতলামি করছে, মারামারি করছে, মারছে মরছে। সিসি ক্যামেরার কন্ট্রোল রুমে ডিউটি কঠিন হচ্ছে, পুলিশের টহল বাড়ছে, রাস্তা দিয়ে ঘন ঘন এম্বুলেন্সের সাইরেন শোনা যাচ্ছে। দেশ জুড়ে আনন্দ হচ্ছে, আনন্দের
বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এইরকম এক দিন দুপুরে হালকা স্নো হচ্ছে রাশেদ সাহেব এসে সবে মাত্র সকালের কাজ সেরে ওই পাশের দেয়ালের সাথে হিটার অন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে অমনি দেখে দরজায় পুলিশ দাঁড়ানো। কি ব্যাপার? ভয় পেয়ে গেলেন। কিন্তু, ভয় পেলে তো চলবে না, বুকে দুরু দুরু নিয়েই এগিয়ে এসে-
-গুড আফটার নুন স্যার। কি ভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি? তুমি কি কিছু খেতে এসেছ, ভিতরে বসবে?
-না না আমি কিছু খেতে আসিনি এবং তোমাকে বিরক্ত করার জন্য আমি দুঃখিত। আমি এসেছি তোমার কাছে একটা ইনফরমেশন নিতে।
-কি ইনফরমেশন বল।
-তোমাদের এখানে কি রাতে চুরি হয়েছে?
-না আমাদের এখানে তো তেমন কিছু হয়নি।
-আচ্ছা এটা কি ওই রেস্টুরেন্ট? একটা রেস্টুরেন্টের নাম বললো
-না না, এটা ওটা না, তবে তুমি যেটা খুঁজছ সেটা আমি চিনি, আস আমার সাথে।
বলে বাইরে গিয়ে দেখিয়ে দিল
-ওই যে সামনে বাম পাশে দেখছ ওইটা।
-, আমি দুঃখিত তোমাকে বিরক্ত করার জন্য, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ
বলে পুলিশ চলে গেলো আর রাশেদ সাহেব হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।


১০৬।
ভিতরে এসে একটু বসেছেন এমন সময় উসকো খুসকো চুল, লাল চোখ, এলোমেলো পোশাক, ভারতীয় চেহারার এক চব্বিশ পঁচিশ বছর বয়সী কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ এক ছেলে দরজা দিয়ে ঢুকে পড়লো। রাশেদ সাহেব উঠে আসার আগেই ঝড়ের বেগে সরাসরি রাশেদ সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে-
-হু আর ইউ?
চেনা নেই, জানা নেই হঠাৎ এই আক্রমণাত্মক প্রশ্ন শুনে একটু ঘাবড়ে গেলেন। যতটা না ভয় পেয়েছিলেন পুলিশ দেখে তার চেয়ে বেশি।
-আমি রাশেদ এখানকার ওয়েটার।
বরাবর স্কটিশ ইংরেজিতেই বলে যাচ্ছে ছেলেটা।
-তা তুমি এখানে বসে আছ কেন? কক্ষনো এভাবে বসবে না। এটা বসার জায়গা না, ডিউটি টাইমে বসবে না।
স্কটিশ ভঙ্গিতে আরও কি কি যেন বললো রাশেদ সাহেব কিছু বুঝলেন কিছু বুঝলেন না। তবে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কি করবেন কিছু বুঝে উঠতে পারলেন না। এই ছেলেই বা কে তাও বুঝলেন না, দাঁড়িয়েই রইলেন। রাশেদ সাহেবকে ঝাড়ি দিয়ে সে ছেলে কিচেনে ঢুকল। দশ পনের মিনিট পর একটা টেক এওয়ের প্যাকেট হাতে বের হয়ে বাইরে রাস্তার পাশে রাখা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো
ছেলেটা চলে যাবার পর রাশেদ সাহেব কিচেনে ঢুকে দেলুকে জিগ্যেস করলো-
-যে এসেছিলো সে কে?
- বলবেন না মালিকের ছেলে।
-মালিকের ছেলে?
-হ্যাঁ।
-এরকম কেন?
-লজ্জার কথা, কি ভাবে বলি!
কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বললো-
-আগে এ ছেলে ভালোই ছিলো। ডান্ডি ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করতো। যতদিন মা এখানে ছিলো তত দিন ভালো ছিলো, মা লন্ডন চলে যাবার পর আজে বাজে সংস্পর্শে মিশে এখন এডিক্টেড হয়ে পরেছে। কিছু দিন আগে টাকা চাইতে এসেছিলো, বাবা দিতে চায়নি তাই কিচেনের ছুড়ি নিয়ে বাবাকে মারতে উঠেছিলো। আমি কোন রকম ধরে ঠেকিয়েছি।
[চলবে]

No comments:

Post a Comment

Back to Top