নক্ষত্রের গোধূলি-[১২৫]-৫২

১০০।
গাড়ি থেকে নেমে চারিদিকে দেখলেনছোট্ট পুরনো পাহাড়ি শহর। জেটিতে জাহাজ দেখে ভাবলেন সম্ভবত টুরিস্ট শহর। ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে পিছনে দেখা জর্জ স্ট্রিট ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই দেখলেন হাতের ডানে
রাস্তার সাথেই চতুর্দিক খোলা বাংলো প্যাটার্নের ভারতীয় মোঘল স্টাইলে সাজানো বিশাল রেস্টুরেন্ট একা দাঁড়িয়ে আছে। এটার পাশ দিয়েই গাড়ি গেছে কিন্তু তখন চোখে পড়েনি। এগিয়ে মেইন গেটের সামনে দাঁড়ালেন। এ সময় তো রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকার কথা। কি করবেন ভাবছিলেন। এই শীতের মধ্যে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন? ব্যাগটা নামিয়ে রেখে কাঁচের দরজায় উঁকি দিয়ে দেখে ভিতরে একজনকে দেখা যাচ্ছে বার কাউন্টারে কি করছেদরজায় নক করে হ্যান্ডেল চাপ দিতেই খুলে গেলো। ব্যাগ নিয়ে ভিতরে ঢুকে তার থেকে পাঁচ সাত বছর বেশি বয়সের মুখে ছোট করে ছাটা দাড়ি ওয়ালা লোকটার কাছে চলে আসলেন।
-আমি রাশেদ, লন্ডন থেকে আসছি।
লোকটা সিলেটী বাংলায় বললেন-
-হ্যাঁ আমি আপনার জন্যেই এখানে এসেছি, এসময় তো বন্ধ থাকে কেও নেই। চলেন বাসায় চলেন। সারা রাত জার্নি করে এসেছেন একটু রেস্ট নেন দুপুরে আসবেন।
-বাসা! মানে কোথায়?
-এখানে আপনাদের লন্ডনের মত রেস্টুরেন্টে থাকার ব্যবস্থা নেই। থাকার জন্য এখানে আলাদা বাসা থাকে সেখানে চলেন
-ও আচ্ছা, চলেন।
বের হবার আগে এক নজরে চারিদিকে দেখে নিলেনআগের রেস্টুরেন্টের চেয়ে সুন্দর করে সাজানো এবং অনেক বড়। বাসায় এসে বিছানা দেখিয়ে দিলেন। এখানেও দেলু আছে।
দেলুকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দিলেন আর বলে দিলেন তুমি যাবার সময় এনাকে নিয়ে যাবে।
ঘড়িতে বারোটা বাজার একটু আগে দেলু আসল।
-চলেন ভাই।
-চলেন
রেস্টুরেন্টেএসে দেলুকে জিজ্ঞেস করলেন-
-তখন যিনি আমাকে নিয়ে গেলেন উনি কে?
-উনিই মালিক।
-নাম কি ময়না মিয়া?
-হ্যাঁ
-আচ্ছা
-এই যে ব্রেড আর ওই ডিম, নাস্তা খেয়ে নেন তার পর ময়না ভাই এলে কাজ কর্ম দেখিয়ে দিবে।
সাড়ে বারোটার দিকে ময়না ভাই এলেন।
-আসেন এদিকে আসেন, দেখেন আপনার কাজ কর্ম দেখে নেন।
বেশ বড় রেস্টুরেন্ট, প্রায় একশো বিশ সিটের হবে। প্রথমে নিয়ে গেলেন টয়লেটে, সেখানে পরিষ্কার করার ব্যবস্থা দেখিয়ে দিল
-এই যে এখানে হ্যান্ড গ্লোভস আছে এটা পরে নিবেন
তার পর এটা ওটা দেখল। টেবিল চেয়ার ঠিকঠাক করা, ছুরি, কাটা চামচ, চামচ সেট করা, টেবিল ক্লথ বিছানো, ন্যাপকিন ভাজ করা থেকে শুরু করে মদের স্টোর, কোন মদ কোথায় থাকে। কোনটা কি ধরনের মদ, কি ভাবে কোন গ্লাসে পরিবেশন করতে হবে। কোথায় কি আছে কোনটা কি কাজে কিভাবে ব্যাবহার হয়।
হোয়াইট ওয়াইন রাখবেন ফ্রিজে, রেড ওয়াইন রাখবেন এই যে এখানে, এটা কখনো ফ্রিজে রাখবেন না। এমন কি কেও কেও বলবে রেড ওয়াইন গরম করে দিতে তখন সিংকে গরম পানি ভরে বোতলটা কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে সার্ভ করবেন। এই ভাবে সব দেখিয়ে দিল। প্রতিদিন এসে কি করতে হবে, রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে যাবার আগে কি করতে হবে সব বলে দিল।
-আচ্ছা এবার আসেন আপনাকে ট্রেনিং দেই।
একটা ট্রেতে কয়েকটা পাইন্ট সাইজের গ্লাসে পানি ভরে সাজিয়ে বললো যান এবার ওই টেবিলে দিয়ে আসেন, মনে করেন ওখানে কাস্টমার আছে। আর এগুলি হলো মদের গ্লাস। তারপর এই ট্রে নিয়ে এই পাশ থেকে ওই পাশে আসা যাওয়া করেন। এখানে এই টেপ থেকে বিয়ার ঢালেন।

মোটা মুটি ভালো ট্রেনিং দিয়ে দিলেন। প্রবীণের দেয়া ট্রেনিং বেশ কাজে লেগেছে। প্রবীণের ট্রেনিং এবং এই ট্রেনিং মিলে রাশেদ সাহেব তার সামনের কাজ বেশ ভালোই রপ্ত করে নিলেন। একটা মেনু দেখিয়ে বললেন-
-অবসর মতো এটা দেখে কোন খাবারের দাম কত, কোন মদের দাম কত মুখস্থ করে নিবেন, আর কোন অসুবিধা হবে না। ওহ ভালো কথা, আমাদের এখানে আপনার ইউনিফর্ম লাগবে, কালো প্যান্ট তো আছে দেখেছি শুধু সার্ট লাগবে। আপনি কাজ শেষ করে দেলুর সাথে টেসকো থেকে দুইটা সার্ট কিনে আনবেন। ও জানে কি রঙ। আপনার সাথে যাবার জন্য আমি ওকে বলে দিব।
-আচ্ছা ঠিক আছে ময়না ভাই, আপনি যেভাবে বলবেন সেই ভাবে করার চেষ্টা করবো। ভুল ভ্রান্তি হলে বলবেন সংশোধন করে নিব।
দুপুরের কাজ শেষ করে বন্ধ করে কিচেনে গেলেনসেখানে দেলু বললো-
-নয়া ভাই খেয়ে নেন তারপর চলেন টেসকোতে যাই।
যাবার পথে দেলুর সাথে আলাপ হলো। বেশ ভালো মনে হলো লোকটাকে, অন্তত আবিংডনের দেলুর মত না। কিছু লেখা পড়া জানেএখানে কিচেনে কাজ করে। তন্দুরি সেফ, কিন্তু কিচেনে আর কোন লোক নেই বলে তাকে সব কাজই করতে হয়। ভালোই। দেলু আরও বলে দিল-
-সামনেও আর কেও নেই আপনি একাই থাকবেন। ময়না ভাই ওখানেও কাজ করে আবার এখানে সেফের কাজও করে। খুব একটা বিজি নেই। যা আছে এই ভাবেই চলে যাবে।
কথা বলতে বলতে কোচ থেকে যেখানে নেমেছিলেন তার পাশ দিয়ে আর একটু এগিয়ে টেসকোতে ঢুকে পড়ল। আবিংডনে যেমন সমারফিল্ড, এখানে তেমন টেসকো সুপারস্টোরদুইটা হালকা আকাশি রঙের সার্ট কিনে চলে এলেন। বাসায় এসে সন্ধ্যায় সেগুলি পরে ডিউটিতে যাবার জন্য ইস্ত্রি করে রেডি করে রেখে বিছানায় একটু গড়িয়ে নিতে শুয়ে পড়লেন। সারা রাত কোচে বসে কেটেছে। মাথা টন টন করছে।
[চলবে]

No comments:

Post a Comment

Back to Top