২১৯।
মনি বা ফিরোজের সাথে আলাপ করে লাভ নেই তারা সবাই দেশে ফিরে যেতে বলবে। কয়েকদিন থেকেই রাশেদ সাহেব ভাবছে কি করা যায়। শেষ পর্যন্ত ভেবে দেখলেন ওরা যে যাই বলুক না কেন এখানে থাকতে না পারলে
মিজানের কথামত আফ্রিকাতে চলে যাওয়াই ভাল। ঝুঁকি নিতেই হবে, ফিরেই তো যাব কাজেই যাবার আগে একটু ঝুঁকি নিয়েই দেখি কি হয়! এখানে এতদিন ভালই ছিলাম। তবে ভাগ্য নিতান্ত ভাল ছিল বলে নির্ঝঞ্ঝাটে থাকা গেছে। ওই তো, অক্সফোর্ড থেকে চলে যাবার পরে ওই রেস্টুরেন্টে হোম অফিস হানা দিয়ে তিন জনকে নিয়ে গেছে আবার মালিকদের ১৫ হাজার পাউন্ড জরিমানাও করেছে। এমনি নানা দিকে নানা খবর সে জানে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হলো কেন্ট এ, লন্ডনের কাছে বলে হাঙ্গামাও বেশি হয় তাই ওদিকে কখনও যাবার চেষ্টা করেনি। অভাগার ভাগ্যাকাশ কখনও সুনীল হয় না ছেড়া কাটা কাল মেঘেই ঢাকা থাকে। ঝড় না হলেও একটু গর্জন কিংবা হুংকার বা অন্তত দমকা বাতাসের ঝাপটা আসে, সব কিছু কুয়াশায় ঢেকে যায়, সামনে চলার পথটাও ঝাপসা হয়ে যায়। তবুও অন্তত এখানে থেকে সংসার চালিয়েছে, মেয়েদের পড়ালেখা হয়েছে আর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো ঋণগুলা শোধ হয়েছে। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে এটাও কম প্রাপ্তি নয়, অনেক বড় প্রাপ্তি। দেখি কি হয়! দেখতে দেখতে প্রায় বছর খানিক মোটামুটি নিরাপদেই কেটে গেল তবে মিজান যথেষ্ট সাহায্য করেছে।
একদিন মিজান ফোন করে জানাল।
-চাচা, আবার সেই উপদ্রব শুরু হয়েছে। আমাদের অফিসে এসে প্রতিটা সাইটের ঠিকানা নিয়ে গেছে ওরা ওইসব সাইট চেক করবে। আপনার সাইটের ঠিকানা দেয়া হয়নি তবে বলা যায় না ওরা যদি মুল কোম্পানির কাছ থেকে তাদের সাইটের ঠিকানা নিয়ে আসে তাহলে আপনার সাইটও ধরা পড়ে যাবে। এখন তো আর নিরাপদ মনে করছি না, কি করবেন?
-তখন যে বলেছিলে আফ্রিকার কথা মনে আছে?
-হ্যাঁ মনে আছে, যাবেন ওখানে?
-তাই ব্যবস্থা কর তাহলে।
-আচ্ছা করব তবে আপনি একদিন আমার বাসায় আসেন, এত কথা তো আর ফোনে বলা যাবে না।
-আচ্ছা আমি এখনই আসছি।
সাউথ শিল্ডে মিজানের বাসায় চলে গেলে মিজান বললো আপনাকে প্রথমে সোয়াজিল্যান্ডে যেতে হবে, ওখানে দুই চার দিন থাকবেন পরে লোকাল বাসে করে সাউথ আফ্রিকার ডারবানে চলে যাবেন। লোকাল বাসে যারা যায় তাদের পাসপোর্ট চেক করে না কাজেই আপনার ভয় নেই। ওখানে আপনার থাকা এবং কাজের জন্য আমি পাকিস্তানি আসাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা করে দিব। আসাদ এখানেই ছিল আগে।
-কোন আসাদ? ওই যে আমি একবার ছুটি নিয়েছিলাম তখন আমার জায়গায় কাজ করেছিল সে?
-হ্যাঁ, চাচা আপনার মনে আছে দেখছি। আমি ওকে বলে দিব। ডারবানে কিছু পাকিস্তানি রেস্টুরেন্ট আছে ওখানে কাজ পাবেন, আসাদও তাই করছে। ওখানেও কিন্তু চাচা ইলিগ্যালি থাকতে হবে তবে ওখানে এখানকার মত এত কড়া না। যদি রেস্টুরেন্টে কাজ নাই পান তাহলে ফেরি করে ফল বিক্রি করবেন অন্যান্য বাঙ্গালিরা যা করে।
রাশেদ সাহেব পাকিস্তানির কথা শুনে একটু থমকে গে্লেন। এরা সাধারণত ভয়ংকর রকমের ক্রিমিনাল হয়ে থাকে। এমন কোন অপকর্ম নেই যা এরা পারে না কিন্তু আসাদের কথা শুনে একটু শান্ত হলেন। আসাদকে সে দেখেছে, দেখে অন্তত কোন সম্ভ্রান্ত ঘরের ছেলে বলে মনে হয়েছে। আদব কায়দায় বেশ কেতাদুরস্ত। ওকে রেখে যখন ছুটিতে যাচ্ছিলেন তখন আসাদ রাশেদ সাহেবের ব্যাগটা নিয়ে গেটে ট্যাক্সি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছিল।
-দেখ, তাই ব্যবস্থা কর।
-ব্যবস্থা আর কী, আপনি লন্ডন যেয়ে সোয়াজিল্যান্ডের টিকেট করে চলে যাবেন যাবার সময় হিথরোতে কিছুই বলবে না।
-কিন্তু সোয়াজিল্যান্ডের ভিসা?
-ওখানে ভিসা লাগে না, এয়ারপোর্ট থেকে স্টিকার দিয়ে দেয় তাতে আপনি তিনমাস থাকতে পারবেন।
-আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অনেকদিন আগে, এটার কি করব?
-টিকেট নেয়ার আগে বার্মিংহাম যেয়ে মেয়াদ ঠিক করে নিলেই হবে, লন্ডন থেকে ঝামেলা করতে পারে তাই বার্মিংহাম থেকে করাই ভাল হবে।
-তাহলে গুছিয়ে নেই, কি বল?
-হ্যাঁ যত তাড়াতাড়ি পারেন চলে যাওয়াই ভাল, এখানে আর নিরাপদ না।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment