নক্ষত্রের গোধূলি-[১২৫]-৫৮

১০৯।
-ময়না ভাই, কোবরা আর কার্লসবার্গ বিয়ারে অতিরিক্ত ফেনা হচ্ছে। আগামী কাল লাইন পরিষ্কার করতে হবে। অনেক দিন করা হয়না।
-সব গুলি পরিষ্কার করবেন। আমি দেখিয়ে দিব, লাঞ্চ টাইমে মনে করবেন।

-শ্যাম্পেন দুইটা ছিলো আজ চলে গেছে
-কোনটা?
-ময়েট
-ঠিক আছে টিল থেকে টাকা নিয়ে কাল টেসকো থেকে আরও চারটা নিয়ে আসবেন, আর কিছু লাগবে?
-কোবরার ব্যারেল শেষ
-হ্যাঁ ওটাও মনে করে কাল সাপ্লাইয়ারকে ফোন করে বলে দিবেন, সাইডার আছে?
-যা আছে মনে হয় চলবে, ব্যারেল দেখলাম প্রায় ভরা, তবে ডায়েট কোক, অরেঞ্জ জুস আর লেমনেড লাগবে।
-ওগুলিও সাপ্লাইয়ারকে বলবেন তিন কেস করে দিতে।
-আচ্ছা।

এই ভাবে রাশেদ সাহেব চালিয়ে যাচ্ছেন, চিন্তা করার সময় নেই, সারাক্ষণ ব্যস্ত। দুচার দিন পর রাস্তার পাশের ফোন বুথ থেকে কার্ড দিয়ে বাড়িতে আলাপ করে খোঁজখবর নেন। লাইবেরিতে যাবার সুযোগ হচ্ছেনা। প্রথমেই এই ধরনের ব্যস্ততার কারণে কাজ কর্ম বুঝে নেয়া এবং এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে সুবিধা হয়েছে। কাজ কর্ম বেশ দ্রুত এগিয়েছে। আস্তে আস্তে ক্রিস্টমাস এসে গেলো এবং একদিন তা ফুরিয়ে গেলো। রাতে সব কাজ কর্ম শেষ হলে ময়না ভাই বললো আপনার দুই দিন অফ জমেছে তা থেকে কাল অফ নিয়ে নিবেন আর এই নেন এক দিনের টাকা।

১১০।
ক্রিস্টমাসের পর দিন বক্সিং ডে। বক্সিং ডেতে সব কিছু বন্ধ থাকে সবাই আগের রাতে ভীষণ রকমের মাতাল হয়ে এই দিন মরার মত ঘুমিয়ে কাটায়। ঘুম ভাঙ্গলে ক্রিস্টমাস উপলক্ষে পাওয়া উপহারের বাক্স খুলতে বসে, এই জন্য এই দিনের নাম বক্সিং ডে। আজ দুপুরে ডিউটি নেই, কোথাও যাবার জায়গা নেই। গত কয়েক দিনের ক্লান্তির কারণে আজ ঘুম ভাঙ্গার পরেও অনেকক্ষণ লেপ গায়ে শুয়েই ছিলেনযখন পিঠ আর বিছানায় থাকতে চাইছিলো না আবার পেটেও ক্ষুধার ভাব মনে হলো তখন উঠে বরফ জলে কোন রকম মুখ ধুয়ে গরম কাপরে নিজেকে ভালো করে প্যাক আপ করে রেস্টুরেন্টের চাবি নিয়ে বের হলেন। ভেবেছিলেন নাস্তা খেয়ে একটু হাঁটা হাঁটি করবেন। সিঁড়ি দিয়ে দোতলা থেকে নিচে নেমে দেখে রাস্তা একেবারে শূন্য। কেও নেই, কিছুই নেই, কোন গাড়ি নেই, সব দোকান বন্ধ। শহরটা যেন লজ্জায় ঘোমটা দিয়ে কোন রকম দাঁড়িয়ে আছে। রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকে নাস্তা খেয়ে কি করি, ভাবছিলেন! মনে হলো সেদিন টেসকোতে যাবার পথে ঢাকার মুন্সিগঞ্জের আখতারের সাথে দেখা হয়েছিলো, টেসকোর পিছনে একটু বাম দিকের একটা রেস্টুরেন্টে কাজ করে। তাহলে যাই একটু দেখে আসি। বের হয়ে আবার তালা দিয়ে আখতারের উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেলেন। আখতার ঘুমে ছিলো, ডেকে তুললেন
-আরে ভাই কি খবর কেমন আছেন?
নিচে লাউঞ্জে নিয়ে গেলো বসার জন্য। এই রেস্টুরেন্টে থাকার জায়গা আছে, ইংল্যান্ডের মত নিচে রেস্টুরেন্ট আর উপরে কর্মচারীদের থাকার জায়গা। আখতার রাশেদ সাহেবকে বসিয়ে তার অনুমতি নিয়ে,
-ভাই একটু বসেন আমি মুখ ধুয়ে আসছি
-আসেন
একটু পরে, আখতার টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে এসে জিজ্ঞেস করল-
-বলেন কি খাবেন কোক না জুস?
-দেন একটা হলেই হবে।
-আচ্ছা, তাহলে আপনাকে একটা ককটেল বানিয়ে খাওয়াই কি বলেন?
-দেন আপনার যা ইচ্ছা।
পাইনেপল জুস আর কোক মিশিয়ে উপরে বরফ কুচি দিয়ে গ্লাস এগিয়ে দিল
-নেন খেয়ে দেখেন কেমন লাগে।
টুকি টাকি খুচরো আলাপ, কবে অফ, মালিক কেমন, থাকার জায়গা কেমন, হিটার আছে কিনা, কর্মচারী কর্মচারী এক জায়গায় হলে যা হয় তাই। রাশেদ সাহেব বললেন-
-গত দুই সপ্তাহে অফ দেয়নি বলেছিলো অফের পরিবর্তে টাকা দিবে।
-দিয়েছে?
-হ্যাঁ দিয়েছে তবে আজ অফ দিলো আর একদিনের টাকা দিয়েছে, গত রাতেই দিয়েছে।
-বলেন কি? আজ অফ দিয়েছে?
-হ্যাঁ তাইতো এখানে আসতে পারলাম।
-আপনাকে ঠকিয়েছে।
-কিভাবে?
-আজতো এমনিতেই বন্ধ, এখানে আসার পথে কিছু খোলা দেখেছেন? রাস্তায় কোন মানুষ দেখেছেন?
-না তা দেখিনি।
-আজ সমস্ত ব্রিটেন বন্ধ। কোথাও কিছু খোলা নেই, কেবল মাত্র হাসপাতালের মত জরুরি কিছু অফিস ছাড়া
আর কিচ্ছু খোলা নেই এমনকি কোন বাস কোচ কিছুই চলবে না।
-তাই নাকি?
-হ্যাঁ আপনি গিয়ে বলেন এটা কি করলেন আমার অফের টাকাটা দিয়ে দেন।
রাশেদ সাহেব সমস্যায় পরলেন, এভাবে কারো কাছে কিছু বলা তার পক্ষে সম্ভব নয়।
-না বাদ দেন সে যা চেয়েছে তা করেছে এতে যদি তার কিছু লাভ হয় বেশ তো হোক আমার আর কত ক্ষতি হয়েছে, এতে কিছু মনে না করলেই হলো।
-ক্রিস্টমাসের গিফট দিয়েছে?
-সেটা আবার কি?
-কেন বুঝেন না? ক্রিস্টমাসের সময় ভালো ব্যবসা করে যার জন্য স্টাফদের কিছু গিফট দেয়, এরকম সব জায়গায় দেয়, কোথাও তো মানে যারা বেশি বিজি করে তারা রীতিমত পুরো এক সপ্তাহের বেতন দিয়ে দেয়, কেও কাপর চোপর দেয়, যার যা খুশি। যদিও এর কোন ধরা বাঁধা নিয়ম নেই তবুও কিছু দেয়।
-না তেমন কিছু দেয়নি, তবে থাক এটাও দরকার নেই, কারণ এ নিয়ে আমি কিছু করতে এমনকি কিছু বলতেও পারব না। আচ্ছা বাদ দেন এ প্রসঙ্গ এ নিয়ে আলাপ করলে তার মনের সঙ্কীর্ণতা নিজের মনে ঢুকে পরবে, চলেন একটু বাইরে যাই।
-কোথায় যাবেন কিছু খোলা নেই কোথাও বসবেন সে উপায় নেই, প্রচণ্ড শীত। এখানেই গল্প করি দুপুরে এখানে খেয়ে যাবেন।
-না আমি চাবি নিয়ে এসেছি, বেশি দেরি করতে পারব না আমাকে এখনই উঠতে হবে।
-কী, খেয়েছেন ককটেল?
-হ্যাঁ দারুণ জিনিষ, আগে খাইনি, আপনার কাছে শিখে নিলাম। আখতার ভাই আজ তাহলে উঠি।
-আচ্ছা, চাবি নিয়ে এসেছেন আবার কি হয়, আবার অফের দিন আসবেন
বলে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিল।
[চলবে]

No comments:

Post a Comment

Back to Top